আটকে থাকা কাজ ও সব সমস্যা সমাধানের আমল

পৃথিবীতে চলার পথে নানান ধরণের বিপদ-আপদ, অসুখ ও সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় মানুষকে। কিন্তু সব বিপদের রক্ষাকর্তা একজন, মহান আল্লাহ। আমরা যদি ঠিকমত তার কাছে নিজেদের জন্য চাইতে পারি তবে তিনি সব বিপদ-আপদ, সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। মানুষের জন্য এমন কিছু আমল রয়েছে যা সঠিকভাবে পালন করতে পারলে পৃথিবীর সব রকম সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। 

আপনি যদি নিচের এই আমলগুলো করতে পারেন তবে আল্লাহ তাআলা তার রহমতের হাত দিয়ে আপনাকে রক্ষা করবেন অবশ্যই।

আমলগুলো হচ্ছে-

– দোয়া ইউনুস প্রতিদিন পাঠ করুন ১০০ বার।
– সূরা ফালাক প্রতিদিন পাঠ করুন ৪০ বার।
– সূরা নাস প্রতিদিন পাঠ করুন ৪০ বার।
– আয়তাল কুরসি প্রতিদিন পাঠ করুন ১০ বার।

দোয়া ইউনুস :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম  ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।’

‘দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই! তুমি মহাপবিত্র! আমি পাপী! আমি গুনাহগার! (আমায় ক্ষমা করো)।’

[এটি সুরা আম্বিয়ার ৮৭ নং আয়াত এ মাহাত্ব্যপূর্ণ আয়াতের ফজিলত হল জামে তিরমিজির ৩৫০৫ নং হাদীস হযরত সায়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী আকরাম (দঃ) এরশাদ করেন, হযরত ইউনুস (আঃ) এর দোয়া যা তিনি মাছের পেটে পাঠ করেছিলেন, এ দোয়ার দ্বারা  যখনই কোন মুসলমান দোয়া করেন আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন।

বিস্তারিত :

হজরত ইউনুস (আ.) নিনেভা নামক জনপদে প্রেরিত হন। কিন্তু নিনেভার লোকজন তার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় তিনি তাদের আল্লাহর গজবের খবর দিয়ে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিনেভা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য রওনা হন। পথিমথ্যে সমুদ্র পড়লে তা পাড়ি দেওয়ার জন্য একটি জাহাজে ওঠেন। জাহাজটি মাঝ সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে।

তখন জাহাজের চালক ধারণা করে যে, জাহাজে কোনো অপরাধী আছে, যে কারণে জাহাজটি বিপাকে পড়েছে। পরে সেকালের নিয়ম অনুযায়ী অপরাধীকে চিহ্নিত করতে লটারির ব্যবস্থা করা হয়। লটারিতে বার বার হজরত ইউনুস (আ.)-এর নাম ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে তাকে সমুদ্রে ফেলে দিলে জাহাজটি বিপাক থেকে রক্ষা পায়, আর একটি বিরাট মাছ তাকে গিলে ফেলে।

তিনি সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হলে একটি প্রকাণ্ড মাছ তাকে গিলে ফেলে। কিন্তু আল্লাহতায়ালার রহমতে ওই মাছ তাকে হজম করতে সমর্থ হয়নি, এমনকি তার দেহের সামান্যতম অংশেও কোনোরূপ ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারেনি। সেই মাছের পেটের-অন্ধকারে বসে আল্লাহর নবী হজরত ইউনুস (আ.) অত্যন্ত সম্মান, বিনয় ও কাতর স্বরে যে দোয়াটি পড়েছিলেন তা দোয়া ইউনুস নামে বহুল পরিচিত।]

সূরা নাস :

‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম

কুল আউযু বিরাব্বিন নাস। মালিকিন্ নাস। ইলাহিন্ নাস। মিন্ শররিল ওয়াস্ ওয়াসিল খান্নাস। আল্লাযী ইউওযাসবিসু ফী ছুদুরিন্নাস। মিনা জিন্নাতি ওয়ান্নাস।’‘দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে।

(হে নবী! ) বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের স্রষ্টার। আশ্রয় গ্রহণ করছি তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে, রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে, গ্রন্থিতে ফুৎকারদানকারী ডাইনিদের অনিষ্ট থেকে, হিংসুকের হিংসার অনিষ্ট থেকে।’

সূরা ফালাক :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম

কুল্ আ‘ঊযু বিরব্বিল্ ফালাক্বি। মিন্ শাররি মা-খলাক্ব। অমিন্ শাররি গ-সিক্বিন্ ইযা-অক্বাব্। অমিন্ শাররি ন্নাফ্ফা-ছা-তি ফিল্ ‘উক্বদ্। অমিন্ শাররি হা-সিদিন্ ইযা-হাসাদ্।’

‘দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে।
(হে নবী! তুমি) বলো, মানুষের অন্তরে গোপনে কুমন্ত্রণাদানকারীর কুমন্ত্রণা এবং জ্বীন ও মানুষের কুমন্ত্রণার অনিষ্ট থেকে মানুষের অধিপতি, মানুষের উপাস্য, মানুষের প্রতিপালকের নিকট আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি।’

[পবিত্র কোরআনে কারিমের শেষের দু’টি সূরাকে মুআউবিয়াতায়ন বলে। এ দুই সূরার একটির নাম সূরা ফালাক এবং অন্যটির নাম সূরা নাস। উভয় সূরা মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফালাক ১১৩ নম্বর সূরা, আয়াত ৫টি, রুকু ১টি আর সূরা নাসের আয়াত ৬টি, রুকু ১টি। এই দুই সূরার মাধ্যমে কোরআন শরিফ শেষ করা হয়েছে।

এই দুই সূরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে। অর্থা‍ৎ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। আর আল্লাহতায়ালা এই দুই সূরার মাঝে সব অনিষ্ট থেকে হেফাজতের অসীম শক্তি ও প্রভাব রেখেছেন এবং বিভিন্ন হাদিসে এ সূরার ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে।]

আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা [২৫৫ নং আয়াত]) :

‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম

‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বিয়্যুম লা তা’খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।’

‘দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে।
আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি শাশ্বত চিরঞ্জীব। বিশ্বপ্রকৃতির সর্বসত্তার ধারক। তিনি তন্দ্রা-নিদ্রাহীন সদাসজাগ। মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর মালিক। তাঁর সদয় অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করার সাধ্য কারো নেই। দৃশ্যমান বা অদৃশ্য, অতীত বা ভবিষ্যৎ—সৃষ্টির সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু জানাবেন, এর বাইরে তাঁর জ্ঞানের সীমানা সম্পর্কে ধারণা করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাঁর আসন, তাঁর কর্তৃত্ব পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের সর্বত্র বিস্তৃত। আর তা সংরক্ষণে তিনি অক্লান্ত। তিনি সর্বোচ্চ সুমহান।’

[হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, একটি বন্দি জিন আমাকে বলেছে, যখন আপনি বিছানায় শুতে যাবেন, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’র প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। তাহলে আপনি সেই রাতে এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর হেফাজতের বহির্ভূত হবেন না। আর সকাল পর্যন্ত শয়তানও আপনার নিকটবর্তী হতে পারবে না। উপরন্তু সেই রাতে যা কিছু হবে, সবই কল্যাণকর হবে। পরিশেষে রাসূল (সা.) বললেন, সে মিথ্যাবাদী হলেও এটা সে সত্যই বলেছে। তবে হে আবু হুরায়রা! জানো কি, তুমি এ তিন রাত কার সঙ্গে কথা বলেছিলে? আমি বললাম, না। রাসূল (সা.) বললেন, সে ছিল শয়তান।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতাস্বরূপ। তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো- ‘আয়াতুল কুরসি’।

অন্য একটি হাদিসে আবু ইমামা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তাকে মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু বেহেশতে যেতে বাধা দেয় না।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping cart0
There are no products in the cart!
Continue shopping
0