মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইলমে গায়েব- (১ম অংশ)

Category:

 ইলমে গায়েব (১ম অংশ)

ইলমে গায়েব (১ম অংশ)

ইলমে গায়েব (১ম অংশ)

আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা) এর হাদিস, না বুঝলে কুরআনের আয়াতের সাথে, তা সাংঘর্ষিক হবে, কীভাবে দেখুন!

যে ব্যক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানেন, অবশ্যই সে মিথ্যা বলল। কেননা তিনি (আল্লাহ্) বলেন, গায়েব জানেন একমাত্র আল্লাহ্

কুরআন কী বলে দেখুনঃ আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েবের ব্যাপারে কৃপণ নন (সূরা তাকভীর ৮১: ২৪)

তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। তিনি তাঁর অদৃশ্য জ্ঞান (ইলমে গায়েব) কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত। (সূরা জ্বীন ৭২:২৬২৭)

খিজির (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান (ইলমে গায়েব) (সূরা কাহফ ৬৫)

এর সমাধান কী? সমাধান হল গায়েব দ্বারা মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)  আল্লাহর স্বত্বাগত জ্ঞানকে বুঝিয়েছেন, আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবকে নয়। আল্লাহ তাঁর মনোনীত রাসুলদেরকে ইলমে গায়েব দান করেন। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  কি তাঁর মনোনীত রাসুল নন?

খিজির (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে
অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম এবং দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান (অদৃশ্যের খবর) (সূরা কাহফ ৬৫)

তিনি বললেনঃ এখানেই আমার আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে দিচ্ছি। নৌকাটির ব্যাপারেসেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ক্রটিযুক্ত করে দেই। তাদের অপরদিকে ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি নৌকা ছিনিয়ে নিত। বালকটির ব্যাপার তার পিতামাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে অবাধ্যতা কুফর দ্বারা তাদেরকে প্রভাবিত করবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে মহত্তর, তার চাইতে পবিত্রতায় ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুক। প্রাচীরের ব্যাপারসেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দায়বশতঃ ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা। (সূরা কাহফ ১৮ : ৭৮৮২)

একমাত্র আল্লাহ আলিমুল গায়েব দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? এর দ্বারা আল্লাহর স্বত্বাগত গায়েবকে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবকে নয়। মনোনীত রাসুলগণ আল্লাহপ্রদত্ত গায়েব প্রাপ্ত

ইমাম কাজী ইউসুফ নাবহানী (রহঃ) বলেন: প্রথমত আপনাদের জানতে হবে যে এলমে গায়ব তথা অদৃশ্য জ্ঞান মহান আল্লাহর অধিকারে; আর মহানবী (দঃ) বা অন্যান্যদের মোবারক জিহ্বায় এর আবির্ভাব ঘটে থাকে তাঁরই তরফ থেকে হয় ওহী (ঐশী বাণী) মারফত, নয়তো এলহাম (ঐশী প্রত্যাদেশ) দ্বারা। হুযূর পূর নূর (দঃ) একটি হাদীসে এরশাদ ফরমান, আমি আল্লাহর নামে কসম করছি, নিশ্চয় আমি কিছুই জানি না কেবল আমার প্রভু যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া। [নোট: তাবুকের যুদ্ধের সময় যখন রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর উট হারিয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি মানুষদের কাছে ওর খোঁজ জানতে চান, যার প্রেক্ষিতে জনৈক মোনাফেক (যায়দ ইবনে আললাসিত আলকায়নুকাঈ) বলেছিল, এই হলেন মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যাঁর কাছে ওহী এসেছে আসমান থেকে, অথচ তিনি জানেন না তাঁর উট কোথায়। কথার পরিপ্রেক্ষিতে নূরনবী (দঃ) আল্লাহর প্রশংসা করে বলেন, অমুক লোক (মোনাফেক) কথা বলেছে। নিশ্চয় আমি কিছুই জানি না শুধু আমার প্রভু খোদাতালা যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া। আর তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে ওই উট অমুক উপত্যকায় একটি গাছের সাথে লাগাম জড়িয়ে গিয়ে আটকে আছে। মানুষেরা তখনি ওখানে দৌড়ে গিয়ে (ওই অবস্থায়) উটটিকে পায়। এই বর্ণনা দুজন সাহাবী হযরত মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রাঃ) হযরত উমারা ইবনে হাযেম (রাঃ) কর্তৃক প্রদত্ত এবং আলমাগাযী পুস্তকে ইবনে এসহাক কর্তৃক লিপিবদ্ধ বলে ইবনে হিশাম তাঁর সীরাহ (:২০৩) আততাবারী তাঁর তারিখ (:১৮৪) গ্রন্থগুলোতে বিবৃত করেছেন; ছাড়া ইবনে হাযম নিজ আলমুহাল্লা (১১:২২২) কেতাবে এবং ইবনে হাজর তাঁর ফাতহুল বারী (১৩:৩৬৪, ১৯৫৯ সংস্করণ) আলইসাবা (:৬১৯) গ্রন্থগুলোতে, আর ইবনে হিব্বান সনদ ছাড়া স্বরচিত আলসিকাত (:৯৩) পুস্তকে বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেন। উপরন্তু, ইবনে কুতায়বা (রাঃ)-কে উদ্ধৃত করে দালাইল আন্ নবুওয়াহ (১৩৭ পৃষ্ঠা) কেতাবে আলতায়মী এটি বর্ণনা করেন। ইমাম নাবহানীর উদ্ধৃত অংশটি হযরত উকবা ইবনে আমির (রাঃ) হতে আবু আলশায়খ তাঁর আলযামা (:১৪৬৮১৪৬৯ #৯৬৭১৪) পুস্তকে বর্ণনা করেন, যা একটি দীর্ঘতর বর্ণনার অংশ এবং যাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নিম্নের কথাগুলো: তুমি এখানে আমাকে কী জিজ্ঞেস করতে এসেছ তা তোমার বলার আগেই আমি বলতে পারি; আর যদি তুমি চাও, তবে তুমি আগে জিজ্ঞেস করতে পারো, আমি এরপর উত্তর দেবো, তুমি এখানে এসেছ আমাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে। মহানবী (দঃ)-এর উট একইভাবে হোদায়বিয়ার অভিযানেও হারিয়েছিল এবং পাওয়া গিয়েছিল] অতএব, আমাদের কাছে তাঁর কাছ থেকে যা কিছু অদৃশ্য জ্ঞান হিসেবে এসেছে, তার সবই হলো ঐশী প্রত্যাদেশ যা তাঁর নবুয়্যতের সত্যতার একটি প্রামাণ্য দলিল

গায়েব দুই প্রকারঃ () এক ধরনের গায়েব আছে, যা যুক্তি প্রমান ভিত্তিক অর্থাৎ প্রমাণাদি দ্বারা অনুভব করা যায় 
() আর এক ধরনের গায়েব আছে, যা দলিলের সাহায্যেও অনুভব করা যায় না  
প্রথম প্রকারের গায়েবের উদাহরনঃ বেহেশতদোজখ এবং আল্লাহ পাকের স্বত্বা গুনাবলী এগুলো সম্পর্কে জগতের সৃষ্ট বস্তু কুরআনের আয়াতসমুহ দেখে জ্ঞান লাভ করা যায়  

দ্বিতীয় প্রকারের গায়েবের উদাহরনঃ মহাপ্রলয় কখন সংঘঠিত হবে, মানুষ কখন মারা যাবে, স্ত্রীর গর্ভের সন্তান ভাগ্যবান না হতভাগা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান গুলো সম্পর্কে দলিল প্রমানের সাহায্যেও জ্ঞান লাভ করা সম্ভবপর হবে না দ্বিতীয় প্রকারের গায়েবকে মাফাতিহুল গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞান ভাণ্ডার বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং ধরনের গায়েব সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

তিনি (আল্লাহ) তাঁর গায়বী বিষয়াদি সম্পর্কে কাহাকেও অবগত করান না, তবে তাঁর মনোনীত রসুলকে ( অদৃশ্য জ্ঞান দান করেন ) যাকে তিনি রসূল রুপে গ্রহন করে নিয়েছেন )
তাফসীরে বায়যাবীতে بالغيب  يؤمنون  আয়াতটির ব্যখ্যায় বলা হয়েছে
গায়েব শব্দ দ্বারা অদৃশ্য বিষয়কে বুঝানো হয়েছে, যা ইন্দ্রিয় সমূহের দ্বারা উপলব্দি করা যায় না সুস্পষ্টভাবে জ্ঞানানুভূতির আওতায় আসে না
তাফসীরে কবীরে সূরা বাকারার শুরুতে ওই একই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে
সাধারণত তাফসীর কারকগনদের মতে গায়ব হল এমন বিষয় যা ইন্দ্রিয়সমূহ থেকে গোপন থাকে অতঃপর গায়বকে দুভাগে ভাগ করা যায়ঃ এক প্রকারের গায়ব হচ্ছে সে সমস্ত অদৃশ্য বিষয়াদি, যেগুলো অবগতির জন্য কোনরুপ দলীল প্রমানের প্রয়োজন হয় না
তাফসীরে রুহুল বয়ানে সুরা বাকারার শুরুতে সেই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিপিবদ্ধ আছে
গায়ব হচ্ছে উহাই যা ইন্দ্রিয় জ্ঞানানুভূতি থেকে সম্পূর্ণরুপে এমনভাবে গোপন থাকে যে, কোন উপায়ে প্রথমদিকে স্পষ্টরুপে উপলব্দি করা যায় না গায়ব দুই প্রকারঃ এক প্রকারের গায়ব হলো যার সম্পর্কে কোন প্রমান নেই যেমন কুরআনের আয়াত عند مفاتيح الغيب ( আল্লাহর কাছেই রয়েছে গায়েবের চাবি সমূহ ) আয়াতে ধরনের গায়েবের কথাই বলা হয়েছে অন্য প্রকারের গায়েব হচ্ছেযার অবগতির জন্য দলীল প্রমাণ আছে যেমন আল্লাহ  তাঁর গুনাবলী بالغيب  يؤمنون  দ্বারা এগুলোর কথাই বলা হয়েছে
পাঠকগণের উপকারার্থে নিন্মের বিষয়টি উপস্থাপন করা হলো
রং চোখ দ্বারা দেখা যায়, নাক দ্বারা ঘ্রান নেয়া হয়, মুখ দ্বারা স্বাদ কান দ্বারা স্বর অনুভব করা হয় সুতরাং মুখ কানের জন্য রং হচ্ছে গায়ব অনুরুপ চোখের জন্য ঘ্রান হলো গায়ব যদি কোন আল্লাহর প্রিয় বান্দা ঘ্রান স্বাদেকে বিশেষ আকৃতিতে সচক্ষে অবলোকন করেন, তবে এও আপেক্ষিক ইলমে গায়ব  ইলমে গায়েবে ইজাফি হিসাবে গন্য হবে যেমন কিয়ামতের দিন কৃতকর্ম সমূহ বিভিন্ন আকৃতিতে দেখা যাবে যদি কেও সেগুলোকে ওই আকৃতিতে এখানেই ( জগতেই ) দেখে ফেলে, তবে তাও ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞানের আওতায় পড়বে
হযরত গাউছে পাক রাদিয়াল্লাহু আনহু ফরমানঃ
জগতের কোন মাস বা কাল আমার কাছে এসে আমার অনুমতি না নিয়ে অতিবাহিত হয় না
রকম যা কিছু বর্তমানে মওজুদ বা আস্তিত্তবান না হওয়ার বা অনেক দূরে বা অন্ধকারে থাকার কারনে দেখা যায় না তাও গায়েব হিসাবে গন্য সম্পর্কে জানাটাও অদৃশ্য জ্ঞান যেমন হুজুর আলাইহি সালাম ভবিষ্যতে উদ্ভাবিত কিংবা আবিস্কৃত হবেএমন বস্তূ সমূহ দেখেছেন বা হযরত উমর বাদিয়াল্লাহু আনহুমদীনা শরীফ থেকে নেহাওয়ান্দে অবস্থানরত হযরত সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দেখেছিলেন এবং স্বীয় আওয়াজ তাঁর কাছে পৌছে দিয়ে ছিলেন অনুরুপ কেউ যদি পাঞ্জাবে বসে মক্কা মুয়াজ্জামা বা অন্যান্য দূরবর্তী দেশসমুহকে হাতের তালু দর্শনের মত স্পষ্টভাবে দেখতে পান, তবে তাও গায়েবের অন্তর্ভূক্ত হবে
উপকরন বা যন্ত্রপাতি সাহায্যে যেই সমস্ত অদৃশ্য বস্তুকে অবলোকন করা যায় , উহা ইলমে গায়েবের পর্যায়ে পড়ে না যেমন যন্ত্রের সাহায্যে কোন মহিলার গর্ভস্থিত সন্তান সম্পর্কে জানা যায় বা টলিফোন রেডিও দ্বারা দূরের আওয়াজ শুনা যায় গুলো ইলমে গায়েবের পর্যায়ে পড়ে না কেননা গায়েবের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, যা কিছু ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করা যায় না, তা গায়েব আর টেলিফোন রেডিও দ্বারা শ্রুত আওয়াজ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করা যায় যন্ত্রের সাহায্যে গর্ভবতীর শিশুর অবস্থা জানাও ইলমে গায়েব নয়
মোট কথা, যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে যদি কোন অদৃশ্য বস্তু প্রকাশিত হয়ে যায় এবং প্রকাশিত হওয়ার পরেই আমরা উহার সম্যক ধারণা লাভে সক্ষম হই, তহলে উহা ইলমে গায়েবের পর্যায়ে পড়ে না সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড

ইলমে গায়েব সম্পর্ক আলোচনা করার পূর্বে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় ভালমতে স্মরণ রাখতে পারলে খুবই উপকারে আসবে এবং অধিকাংশ আপত্তি সমূহ আপনা আপনিই মীমাংসা হয়ে যাবে

 

() যে কোন বিষয়ের নিছক জ্ঞান দূষণীয় নয় তবে হ্যাঁ  দূষণীয় কোন কিছু করা বা করার উদ্দেশ্য শিখা দূষণীয় অবশ্য জ্ঞানের কোন কোন বিষয় অন্যান্য বিষয়াদির জ্ঞানের তুলনায় উৎকৃষ্ট যেমন আকাইদ শরীয়তের সুফীবাদ সম্পর্কীত জ্ঞান  অন্যান্য শাস্ত্রের জ্ঞান থেকে উৎকৃষ্ট কিন্তু কোন জ্ঞানই স্বভাবতঃ দূষণীয় নয় উদাহরণ কুরআনের কোন আয়াত পাঠে অপরাপর আয়াত অপেক্ষা তুলনামুলক ভাবে বেশী সওয়াব পাওয়া যায় قُلْ هُوَ اللهُ পাঠে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠের সওয়াব আছে কিন্তু تَبَّتْ يَدَى এর মধ্যে পরিমাণ সওয়াবি নেই (তাফসীরে রূহুল বয়ানে وَلَوْكَانَ مِنْ عِنْدِاللهِ لَوَجَدُوْا فِيْهِ اِخْتِلَافًا كَثِيْرًا আয়াত সম্পর্কিত বিবরণ দ্রষ্টব্য) কিন্তু কোন আয়াতই খারাপ নয়

কেননা যদি কোন জ্ঞান দূষণীয় হতো তাহলে তা আল্লাহ তাআলার অপরিসীম জ্ঞানের আওতায় আসত না, কেননা তিনি যাবতীয় দোষত্রুটি থেকে পবিত্র; অনুরূপ আল্লাহর স্বত্ত্বা গুণাবলী সম্পর্কিত জ্ঞান ফিরিশতাদেরও ছিল। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে জগতের ভালোমন্দ সবকিছুর জ্ঞান দান করা হয়েছিল এবং জ্ঞানের দ্বারাই তাঁর  শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে। জ্ঞানের বদৌলতেই তিনি ফিরিশতাদের উস্তাদ সাব্যস্ত হয়েছিলেন যদি খারাপ বস্তু সমূহের জ্ঞান দূষণীয় হতো তাহলে আদম (আলাইহিস সালাম) কে সে জ্ঞান দান করে কখনও উস্তাদ নিযুক্ত করা হতো না পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো কুফর শিরক কিন্তু ফিকহ শাস্ত্রবিদগণ বলেন হিংসাদ্বেষ পরশ্রীকাতরতা শত্রুতা সম্পর্কিত জ্ঞান এবং কুফর শিরক সম্বলিত শব্দ সমূহ জানা ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয় যাতে সেসব নীতি বহির্ভূত কার্য থেকে বিরত থাকা যায় অনুরূপ যাদু দমন করার জন্য যাদুবিদ্যা শিখাও অত্যাবশ্যক ফতওয়ে শামীর মুকাদ্দামায় আছেঃ

وَعِلْمُ الرِّيَاءِ وَعِلْمُ الْحَسَدِ وَالْعُجَبِ وَعِلْمُ الْاَلْفَاظِ الْمُحَرَّمَةِ وَالْمُكَفِّرَةِ وَلَعُمْرِىْ هَذَا مِنْاَهَمِّ الْمُهَمَّاتِ

অর্থাৎ রিয়া, হিংসাবিদ্বেষ আত্মগরিমা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং হারাম কুফর সম্বলিত শব্দ সমূহ শিখা ফরজ (অবশ্য কর্তব্য)

খোদার শপথ ইহা একান্ত প্রয়োজনীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শামীর উক্ত মুকাদ্দামায় علم نجوم ورمل (জ্যোতিষ শাস্ত্রের জ্ঞান) এর বর্ণনায় বলা হয়েছে জাহিরাতুন নাজেরা নামক কিতাবে উল্লেখিত আছে যে অমুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলের (যে অঞ্চল শরীয়তের পরিভাষায় দারুল হরব নামে আখ্যায়িত) বিধর্মীদের যাদু প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে যাদুবিদ্যা শিখা ফরজ (অবশ্য কর্তব্য)  

ইহয়ায়ে উলুমের প্রথম খণ্ডের ১ম অধ্যয়ের ৩য় পরিচ্ছেদে ঘৃণ্য নিন্দনীয় জ্ঞান সমূহের বর্ণনায় উল্লেখিত আছে যে কোন বিদ্যার দোষ ত্রুটি নিছক বিদ্যার করণে নয় বরং আল্লাহর বান্দাদের ব্যাপারে উক্ত জ্ঞানের প্রয়োগ অনুসারে তিনটি কারণেই দূষণীয় হয়ে থাকে
উল্লেখিত বর্ণনা থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল যে কোন কিছুর নিছক জ্ঞান দুষণীয় নয় এতে বিরুদ্ধবাদীদের উত্থাপিত প্রশ্নেরও মীমাংসা হয়ে যায় প্রশ্নটি হচ্ছে ধারণা পোষণ করা দরকার যে হজুর আলাইহিস সালামের খারাপ বিষয়াদির যেমন চুরি ব্যভিচার যাদু কবিতা ইত্যাদির জ্ঞান ছিল   
কেননা এগুলো সম্পর্কে এজন্যেই তারা শয়তান হযরত আযরাইল (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞানের পরিধি হুজুর আলাইহিস সালামমের জ্ঞানের তুলনায় বেশী প্রসারিত বলে দাবী করেন প্রত্যুত্তরে বলতে হয়। আচ্ছা, বলুন, এসব বিষয়ের জ্ঞান খোদার আছে কিনা? তাদের বক্তব্যটি অনেকটা অগ্নি উপাসকদের কথার মত। মজুসী, সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে যে, আল্লাহ তাআলা নিকৃষ্ট বস্ত সূহের সৃষ্টিকর্তা নন, কেননা খারাপ জিনিস সময়হ সৃষ্টি কতরাটাও দূষণীয় (নাউযুবিল্লাহ) যদি যাদু বিদ্যা দুষণীয় হেতো, তাহলে এর শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হারুত মারুত নামে দুফিরিস্তা পৃথিবীতে আবতরণ করলেন কেন? হযরত মুসা আলইহিস সালাম এর সত্যতা যাছাই করে তাঁর উপর ঈমান এনে ছিলেন। দেখুন, যাদু বিদ্যা (এখানে) ঈমানের ওসীলা হয়ে গেল।
) সমস্ত নবী সৃষ্টি কুলের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে দান করা হয়েছে। মৌলভী কাসেম নানুতবী সাহেবও তাঁর তাহজিরুন নাস কিতাবে এটা স্বীকার করেছেন। এর সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি পরে পেশ করা হবে। কোন সৃষ্ট জীবের যে বস্তুর জ্ঞান থাকবে, সে জ্ঞানের অধিকার হুযুর আলাইহিস সালামও নিশ্চয় হবেন। বরং সবাই যে জ্ঞান লাভ করেছেন, উহা হুযুর আলাইহিস সালামের ভাগ বন্টন থেকেই পেয়েছে। শিক্ষক থেকে ছাত্র যে জ্ঞান লাভ করে, সে বিষয়ে শিক্ষকেরও  নিশ্চয়ই জ্ঞান থাকতে হবে। নবীগণের মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) আছেন। জন্যে হযরত আদম (আলাইসি সালাম) হযরত খলীলুল্লাহ (আলাইহিস) এর জ্ঞান সম্পর্কেও পরে আলোচনা করা হব

 

) সমস্ত ঘটানাবলী যা পূর্বে সংঘটিত হয়েছে ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে, কুরআনও লওহ মাহফুজে রক্ষিত আছে। এই লওহ মাহফুজ পর্যন্ত ফিরিশতা কোন কোন ওলী নবীগণের দৃষ্ট প্রসারিত। এবং সেটা সব সময় হুযূর আলাইহিস সালামএর সামনে রয়েছে। এজন্য আমি লওহ মাহফযুজ  কুরআনী জ্ঞান সম্পর্কে লোকপাত করবো। অনুরূপ তকদীরের লেখক ফিরেশতার জ্ঞান সম্পর্কেও আলোচনা করবো। হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের বিস্তার প্রমাণ করার জন্যেই এসব বিষয়ের আবতারণা করা হবে।সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড

ইলমে গায়বে অবিশ্বাসীগণ যখন তাদের বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণাদি উপস্থাপন করে তখন নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন (এজহাতুল গায়ব গ্রন্থের ৪র্থ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য )

 

) উপস্থাপিত আয়াতটি সুষ্পষ্ট অকট্রভাপবে ব্যাখ্যাকৃত হতে হবে যা বিবিধ অর্থ বোধক বা রূপক ব্যাখ্যার যোগ্য হলে চলবে না আর হাদীছ উপস্থাপিত করা হলে হাদীছটি রেওয়ায়েতের দিক থেকে মুতাওয়াতির হতে হবে (সাহাবায়ে কিরাম তাবেয়ীন তাবেয়ে তাবেয়ীন ৩টি যুগেই যে হাদীছের অগণিত বর্ণনাকারী হয় উহাই হাদীছে মুতাওয়াতির )

 

) আয়াত বা হাদীছ যেন জ্ঞান দান করার বিষয়  অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয় অর্থাৎ আল্লাহ জ্ঞান দান করেনি কিংবা আমাকে জ্ঞান দান করা হয়নি ধরনের অস্বীকৃতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত থাকতে হবে

 

) কোন বিষয়কে প্রকাশ না করলে তাতে সে বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞানতা বোঝা যায় না। এমনও হতে পারে যে প্রিয় নবী হুযুর (আলাইহিস সালাম) কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। কিন্তু কোন বিশেষ কারণে উহা ব্যক্ত করেননি অনুরূপভাবেহুযুর আলাইহিস সালামের  কথা বলা যে আল্লাহ জানেন আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা কিংবা আমি কি জানি? ইত্যাদি বাক্য দ্বারা হুযুর আলাইহিস সালামেরজ্ঞানের অস্বীকৃতি বোঝা যায় না ধরনের উক্তি সত্ত্বাগত জ্ঞানের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে নীরব রাখার জন্যও ব্যবহৃত হয়ে থাকে

 

) যে বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয় সে বিষয়টি যেন কোন ঘটনা সম্পর্কিত হয় উহা কিয়ামত পর্যন্ত সময় সিমানার মধ্যে হয় কেননা আল্লাহর যাবতীয় গুনাবলী কিয়ামতের পরবর্তী বষয়াদি সম্পর্কিত জ্ঞানের আমরাও দাবী করি না
চারটি পরিচ্ছেদের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড

আল্লাহ তায়ালা বলেন

() وَعَلَّمَ ادَمَالْاَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ

(এবং আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত কিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন অতঃপর সে সমস্ত বস্তু ফিরিশতাদের কাছে উপস্থাপন  করলেন )
তাফসীরে মাদারেকে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ

وَمَعْنَى تَعْلِيْمِه اَسْمَاءِ الْمُسَمِّيَاتِ انَّهُ تَعَالَى اَرَاهُ الاَجْنَاسَ الَّتِىْ خَلَقَهَا وَعَلَّمَهُ اَنَّ هذَا اِسْمُه فَرَسٌ وَهذَا اِسْمُه بَعِيْرٌ وَهذَا اِسْمُهَ كَذَا وَعَنْ اِبْنِ عَبَّسٍ عَلَّمَهُ اِسْمَ كُلِّ شَئْىٍ حَتّ الْقَصْعَةَ وَالْمَغْرَ فَةَ

(হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়ার অর্থ হচ্ছেআল্লাহ তাআলা তাঁকে তাঁর সৃষ্ট সব কিছু দেখিয়েছেন এবং বলে দিয়েছিন যে এটার নাম ঘোড়া ঐটার নাম উট এবং ওটার নাম অমুক হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে তাঁকে প্রত্যেক কিছুর নাম, শিখিয়ে দিয়েছেন এমন কি পেয়ালা কাঠের চামচের নাম পর্যন্ত
তাফসীরে খাযেনে আয়াতের ব্যাখ্যায় একই কথা বলা হয়েছে তবে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয়েছে যে

وَقِيْلَ عَلَّمَ ادَمَ اَسْمَاءَ الْمَلَئِكَةِ وَقِيْلَ اَسْمَاءَ ذُرِّيَّتِه وَقِيْلَ عَلَمَّهُ اللَّغَاتَ كُلَّهُا

(কারো মতে আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত ফিরিশতাদের নাম কারো মতে তার সন্তান সন্ততিদের নাম আবার কারো মতে সমস্ত ভাষা শিখানো হয়েছিল)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে কবীরে লিখা হয়েছেঃ

قَوْلُه اَىْ عَلَّمَهُ صفَاتَ الْاَشْيَاءِ وَنَعُوْ تَهَا وَهُوَ الْمَشْهُوْرُ اَنَّ الْمُرَالدَ اَسْمَاءُ كُلِّشَئْىِ مِنْ خَلْفٍ مِنْ اَجْنَاسِ الْمُحَدَثَاتِ مِنْ جَمِيْعِ اللُّغَاتِ الْمُخْتَلِفَةِ الَّتِىْ يَتَكَلَّمُ بِهَا وَلَدُ ادَمَ الْيَوْمَ مِنَ الْعَرَبِيَّةِ وَالْفَارِسِيَّةِ وَالرُّوْ مِيَّةِ وَغَيْرِهَا

(আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত বস্তুর বৈশিষ্ট্য অবস্থাদি শিক্ষা দিয়েছেন কথাই প্রসিদ্ধ লাভ করেছে যে সৃষ্টবস্তু দ্বারা বোঝানো হয়েছে অচিরন্তন প্রত্যেক বস্তুর নাম সমূহ যেগুলো বিভিন্ন ভাষায় প্রচলিত হবে যে নামগুলো আজ পর্যন্ত আদম সন্তান সন্ততিগণ আরবী ফার্সী রুমী ইত্যাদি ভাষায় ব্যবহার করে আসছে
তাফসীরে আবুস সাউদে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ

وَفِيْلَ اَسْمَاءَ مَاكَانَ وَمَا يَكُوْنُ وُقِيْلَ اَسْمَاءِ خَلْقِه مِنَ الْمَعْقُوْ لاَتِ وَالْمَحْسُوْسَاتِ وَالْمُتَخَيَّلَاتِ وَالمَوْهُوْ مَاتِ وَالْهَمَهُ مَعْرَفَةَ ذَوَاتِ الْاَشْيَاءِ وَاَسْمَءَ هَاخَوَ الصَهَا وَمَعَارِ فَهَا اُصُوْلَ الْعِلْمِ وَقَوَانِيْنَ الصَّنْعَاتِ وَتَفَاصِيْلَ لْاَتِهَا وَكُيْفِيَةَ اِسْتِعْمَالَاتِهَ

(কারো মতে আদম (আলাইহিস সালাম) কে অতীত ভবিষ্যতের সমস্ত বিষয়ের নাম শিখিয়েছিলেন। ইন্দ্রিয়াতীত ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য কাল্পনিক খেয়ালী সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছিলেন সব কিছুর সত্ত্বা নাম বৈশিষ্ট্য পরিচিতি জ্ঞান বা বিদ্যার নিয়মাবলী পেশা কারিগরী নীতিমালা এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সাজসর ক্রোমের বিস্তারিত বর্ণনা সেগুলোর ব্যবহার প্রণালী আদম (আলাইহিস সালাম) কে অবহিত করেছিলেন।)
তাফসীরে রুহুল বয়ানে আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ

وَعَلَّمَه اَحْوَالَهَا وَمَا يَتَعَلَّقَ بِهَا مِنَالْمَنَافِعِ الدِّيْنِيَّهِ وَالدُّنْيَوِيَّةِ وَعَلَّمَ اَسْمَاءَ الْمَلَا ئِكَةِ وَاَسْمَاءِ ذُرِّيَّتِهِ وَاَسْمَاءَ الْحَيْوَانَاتِ وَالْجَمَادَاتِ وَصَنْعَةَ كُلِّ شَئْىٍ وَاَسْمَاءَ الْمُدْنِ وَالْقُرَى وَاَسْمَاءَ الطَّيْرِ وَالشَّجَرِ وَمَا يَكُوْنُ وَاَسْمَاَءِ كُلِّ شَئْىٍ يَخْلُقُهَا اِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَاَسْمَاءَ الْمَطْعُوْ مَاتِ وَالْمَشْرُوْبَاتِ وَكُلِّ نَعِيْمِ فِى الْجَنَّةِ وَاَسْمَاءَ كُلِّ شَيْئٍ وَفِى الْخَبْرِ عَلَّمَهُ سَبْعَ مِاَئةِ اَلْفِ لُغَاتٍ

(হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) সমস্ত জিনিসের অবস্থাদি শিখিয়েছেন এবং এগুলোর অন্তর্নিহিত ধর্মীয়পার্থিব উপকারিতার কথা বলে দিয়েছেন। তাকে ফিরিশতাদের নাম তার বংশধর জীব জন্তু প্রাণীবাচক বস্তু সমূহের নাম শিক্ষা দিয়েছেন প্রত্যেক জিনিস তৈরী করার পদ্ধতি সমস্ত শহর গ্রামের নাম সমস্ত পাখী বৃক্ষ রাজির নাম যা হয়েছে এবং যা হবে সবকিছুর নাম কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছুসৃষ্টি হবে সবকিছুর নাম যাবতীয় আহর্য দ্রব্য সামগ্রীর নাম বেহেশতের প্রত্যেক নিয়ামতের নাম মোট কথা প্রত্যেক কিছুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন হাদীছ শরীফে আছে যে আদম (আলাইহিস সালাম) কে সাত লাখ ভাষা শিখিয়েছেন
উপরোক্ত তাফসীর সমূহ থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে যা কিছু হয়েছে যা কিছু হবে সমস্ত কিছুর সম্পূর্ণ জ্ঞান হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে দান করা হয়েছে। তাকে বিভিন্ন ভাষাজ্ঞান দান করেছেন বিভিন্ন জিনিসের উপকারিতা অপকারিতা তৈরী করার পদ্ধতি যন্ত্রপাতির ব্যবহার সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছেন এখন আমাদের আকা মওলা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞান ভাণ্ডার দেখুন। সত্যি কথা এই যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপক জ্ঞান নবী করিম আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোটা তুল্য বা ময়দানের এক কণা সদৃশ।
শাইখ ইবনে আরবী তদ্বীয় ফুতুহাতে মক্কীয়া গ্রন্থে দশম অধ্যায়ে বলেছেনঃ

اَوَّلُ نَائِبٍ كَانَ لَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْفَتُهَ اَدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ

(অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালামের প্রথম খলীফা প্রতিনিধি হলেন হযরত আদম (আলাইহিস সালাম)

এতে বোঝা গেল যে, হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) হলেন হুযুর আলাইহিস সালামের খলীফা খলীফা হচ্ছেন তিনিই, যিনি আসমান বা প্রকৃত মালিকের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্থলাভিশিক্ত হয়ে কাজ করেন। হুযুর আলাইহিস সালামের জন্মের আগেকার সমস্ত নবী (আলাইহিস সালাম) তারই প্রতিনিধি ছিলেন কথাটি মৌলভী কাসেম ছাহেরও তদীয় তাহজীরুন নাস গ্রন্থে লিখেছেন যার বর্ণনা পরে করা হবে হলো প্রতিনিধির ব্যাপক জ্ঞানের অবস্থা
কাযী আয়ায (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এর শেফা শরীফ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ নসিমুর রিয়ায উল্লেখিত আছেঃ

اِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَرْضَتْ عَلَيْهِ الْخلَائِقُ مِنْ لَّدْنِ اَدَمَ اِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ فَعَرَفَهُمْ كُلُّهُمْ كَمَا عَلَّمَ اَدَمَ الْاَلسْمَاءَ كُلَّهَا

অর্থাৎ হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে আরম্ভ করে রোজ কিয়ামত পর্যন্ত তার বংশজাত আওলাদকে হুযুর আলাইহিস সালামের সম্মুখে উপস্থাপিত করা হয়েছিল। তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের সবাইকে চিনেছিলেন যেমনিভাবে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সবকিছুর নাম শিখানো হয়েছিল।
ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে হুযুর (আলাইহিস সালাম) সবাইকে জানেন সকলকে চিনেন

()  وَيَكُوْنَ لرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا

( রসুল তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী সাক্ষী হবেন ) আয়াতির ব্যাখ্যায় তাফসীরে আযীযীতে লিখা হয়েছে হুযুর (আলাইহিস সালাম) স্বীয় নবুয়তের আলোকে প্রত্যেক ধর্ম পরায়ণ ব্যাক্তির ধর্মের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন কোন ব্যক্তি ধর্মের কোন স্তরে পৌছেছেন তার ঈমানের হাকীকত কি এবং তার পরলৌকিক উন্নতির পথে অন্তরায় কি এসব কিছুইতিনি জানেন। সুতরাং হুযুর(আলাইহিস সালাম) তোমাদের বিশুদ্ধ চিত্ততা কপটতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল জন্যই তো পৃথিবীতে উম্মতের পক্ষে বা বিপক্ষে তার সাক্ষ্য শরীয়তের বিধানমতে গ্রহণীয় এবং অবশ্যই পালনীয়
তাফসীরে রূহুল বয়ানে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ

هَذَا مَبْنِىّ عَلَى  تَضْمِيْنِ الشَّهِيْدِ مَعْنَى الرَّقِيْبِ وَالْمُطَلِّعِ وَالْوَجْهُ فِىْ اِعْتِبَارِ تَضْمِيْنِ الشَّهِيْدِ الْاِشَارَةُ اِلَى اَنَّ التَّعْدِيْلَ وَالتَّزْكِيَّةَ اِنَّمَا يَكُوْنُ عَنْ خُبْرَةِ وَمَرَاقَبَةٍ بِحَالِ الشَّاهِدِ وَمَعْنَى شَهَادَةِ الرَّسُوْلِ عَلَيْهِمْ اِطَّلَاعُهَ رُتَبَةَ كُلَّ مُتَدَينٍ بَدِيْنِه فَهُوَ يضعْرِفُ دَنَوْبَهُمْ وَحَقِيْقَةَ اِيْمَانِهِمْ وَاَعْمَالِهُمْ وَحَسَنَاتِهمْ وَسَيْئَاتِهِمْ وَاِخْلَاصِهُمْ وَنِفَاقِهُمْ وَغَيْرِ ذَالِكَ بِنُوْرِالْحَقِّ وَاُمَّتُهَ يَعْرِفُوْنَ ذَالِكَ مِنْ سَائِرِ الْاُمَمِ بِنُوْرِه عَلَيْهِ السَّلَامُ

অর্থাৎ এটা কারণেই যে আয়াতে উল্লেখিত شهيد শব্দটি রক্ষণাবেক্ষণাকারী ওয়াকিফহাল কথাটাও অন্তর্ভুক্ত করে এবং অর্থ দ্বারা একথারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে কোন ব্যক্তির যথার্থতা দূষণীয় সাক্ষ্য প্রদান তখনই সম্ভবপর হবে, যখনই সাক্ষী উক্ত ব্যক্তির যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে  সম্যকরূপে ওয়াকিফহাল হয়। হুযুর আলাহিস সালামের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তিনি প্রত্যেক ধর্মপরায়ণ  ব্যক্তির ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত। সুতরাং বোঝা যায় যে হুযুর (আলাইহিস সালাম) মুসলমাদের গুনাহ সমূহ তাদের ইসলামের হাকীকত, তাদের ভালমন্দ কার্যাবলী তাদের আন্তরিকতা কপটতা ইত্যাদিকে সত্যের আলোর বদৌলতে অবলোকন করেন হুযুর (আলাইহিস সালামএর নিকট তার  নুরের ওসীলায় অন্যাণ্য সমস্ত উম্মতের অবস্থা কিয়ামতেন ময়দানে সস্পর্ণরূপে উদ্ভাসিত হবে।
তাফসীরে খাযেনে আয়াতেন ব্যাখায় লিখা হয়েছে

ثُمَّ يُؤْتَى بِمُحَمَّدٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَيُسْئَلُهُ عَنْ حَالِ اُمَّتِه فَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَشْهَدُ بِصِدْقِهِمْ

(অতঃপর কিয়ামতের দিন হুযুর আলাইহিস সালামকে আহবান করা হবে। এর পর আল্লাহ তাআলা তাকে তার   উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তখন তিনি তাদের পবিত্রতা সত্যতার সাক্ষ্য দিবেন )
(তাফসীরে মাদারেকে ২য় পারার সূরায়ে বাকারার আয়াতের তাফসীরে লিখা হইয়াছেঃ

فَيُؤْتَى بِمُحَمَّدٍ فَيُسْئَلُ عَنْ حَالِ اُمَّتِه فَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَشْهَدُ بِعَدَ الَتِهِمْ وَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَعْلَمُبِعَدَا لَتِكُمْ

অর্থাৎ অতঃপর হুযুর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) আহবান করা হবে তার উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তিনি স্বীয় উম্মতের সাফাই বর্ণনা করবেন এবং তাদের ন্যায় পরায়ণ যথার্থ হওয়া সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালাম আপনাদের যথার্থতা সম্পর্কে অবগত আছেন
আয়াত তাফসীর সমূহে এটাই বলা হয়েছে যে কিয়ামতের দিন অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরামের (আলাইহিস সালাম) উম্মতগণ আল্লাহর দরবারে আরয করবে হে আল্লাহ! আমাদের কাছে তোমার কোন নবী আগমন করেননি। পক্ষান্তরে সমস্ত উম্মতের নবীগণ আরয করবেনঃ হে খোদা আমরা তাদের কাছে গিয়েছি তোমার নির্দেশাবলী তাদের কাছে পৌঁছিয়েছি কিন্তু তারা গ্রহণ করেনি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবীগণকে বলা হবে যেহেতু তোমরা বাদী সেহেতু তোমাদের দাবীর সমর্থনে কোন সাক্ষী উপস্থাপন কর তারা তখন তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে হুযুর  (আলাইহিস সালামের উম্মতকে পেশ করবেন। তারা সাক্ষ্য দেবেন হে আল্লাহ তোমার নবীগণ সত্যবাদী তারা তোমার নির্দেশাবলী স্ব স্ব উম্মতের কাছে পৌছিয়েছিলেন
এখানে দুটি বিষয়ের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা দরকার।
প্রথমতঃমুসলমানগণ সাক্ষ্য দেয়ার উপযুক্ত কিনা। (ফাসিক, ফাজির কাফিরদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। একমাত্র পরহেযগার মুসলমানদের সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য।) দ্বিতীয়তঃ সমস্ত লোকগণ তাদের পূর্বেকার নবীগণের জামানা দেখেননি তবুও তারা  কিভাবে সাক্ষ্য  দিচ্ছেন মুসলমানরা আরয করবেন হে খোদা! আমাদেরকে তোমার হাবীব মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আগেকার নবীগণ ধর্ম প্রচার করেছিলেন। এটা শুনেই আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। তখন হুযুর আলাইহিস সালামকে আহবান করা হবে
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) দুটি বিষয়ের সাক্ষ্য দিবেন। একটি হলো সমস্ত লোকগণ এমন পাপিষ্ট বা কাফির নয় যে তাঁতের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তাঁরা পরহেযগার মুসলমান। অন্যটি হলো তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলবেনহ্যাঁ, আমিই তাদেরকে বলেছিলাম যে আগেকার নবীগণ নিজ নিজ উম্মতের কাছে খোদার ফরমান পৌঁছিয়েছিলেন
অতঃপর সব নবীগণের পক্ষে রায়  দেয়া হবে
বর্ণনা থেকে নিম্নোল্লেখিত কয়েকটি বিষয় জানা গেল
একঃহুযুর আলাইহিস সালাম কিয়ামত পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠে  আগমণকারী মুসলমানদের ঈমান, আমল, রোযা, নামায নিয়ত সম্পর্কে সম্যকরূপে অবগত নচেৎ তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়া কিভাবে সম্ভব?  কোন মুসলমানের অবস্থা তার  দৃষ্টি বহির্ভূত হতেই পারে না হযরত নূহ (আলাইহিস সালাম)  তাঁর কওমের ভবিষ্যৎ বংশধরদের অবস্থা জেনে আবেদন করেছিলেনহে খোদা! এদের বংশোদ্ভূত  লোকগণও পাপিষ্ট কাফির হবে সুতরাং, তুমি তাদেরকে ডুবিয়ে দাও। হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) যে শিশুটিকে হত্যা করেছিলেন, তার ভবিষ্যৎ অবস্থা  সম্পর্কে অবগতি লাভ করে বুঝতে পেরে ছিলেন যে, যদি সে জীবিত থাকে তবে আবাধ্য হবে তাহলে হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে কারো অবস্থা কিভাবে গোপন থাকতে পারে?
দুইঃপূর্ববর্তী নবীগণ তাঁদের উম্মতগনের অবস্থা হুযুর আলাইহিস সালাম নূরে নবুয়তের বদৌলতে অবলোকন করেছিলেন এবং তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে সাল্লাম) সাক্ষ্যটা ছিল একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য। যদি তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সাক্ষ্য শ্রুত বিষয়ের সাক্ষ্য হতো, তাহলে ধরনের সাক্ষ্য মুসলমানরা তো আগেই দিয়েছে   শ্রুত বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের সর্বশেষ পর্যায়ে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেয়া হয়
তিনঃ থেকে আরও বোঝা গেল যে, আল্লাহ তাআলানবী যে সত্যবাদী, তা জানা সত্ত্বেও সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে রায় দেন অনুরুপ যদি হুযুর আলাহিস সালাম, বিচার কার্য তদন্ত করেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ করেন, তখন কথা বলা যাবেনা যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সে বিষয়ে অবগত নন। দায়েরকৃত মুকাদ্দমায় এটায় নিয়ম। ( ব্যাপারে আর বিস্তারিত জানতে হলে আমার রচিত কিতাব শানে হাবীবুর রহমানদেখুন) সাক্ষ্যের উল্লেখ পরবর্তী আয়াতের মধ্যেও রয়েছে

) وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيْدًا

অর্থাৎ যে মাহাবুব (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি আপনাকে এদের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে আনব
তাফসীরে নিশাপুরীতে আয়াতের  তাফসীরে উল্লেখিত আছে

لِاَنَّ رُوْحَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ شَاهِدٌ عَلَى جَمِيْعِ الْاَرْوَاحِ وَالْقُلُوْبِ وِالنَّفُوْسِ بِقَوْلِه عَلَيْهِ السَّلَامُ اَوَّلُ مَاخَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ

অর্থাৎ এটা কারনে যে হুজুর আলাইহিস সালামের রুহ মোবারক সমস্ত রুহ দিল সত্তা সমুহকে দেখতে পান কেননা তিনিই বলেছেনআল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হলো আমার নূর
আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বয়ানে আছেঃ

وَاعْلَمْ اَنَّهُ يُعْرَضُ عَلَى النَّبِىْ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَعْمَالُ اُمَّتِهِ غَدَوْةً وَعَشِيَّةً فَيَعْرِ فُهمْ بِسِيْمَاهُمْ اَعْمَالَهُمْ فَلِذَالِكَ يَشْهَدُ عَلَيْهِمْ

হুজুর আলাইহিস সালামের কাছে তার উম্মতের আমলসমূহ সকাল বিকাল পেশ করা হয়। তাই তিনি উম্মকতকে তাদের চিহ্ন দৃষ্টে চিনেন তাদের কার্যাবলী সম্পর্কে অবগত হন। এজন্য তিনি রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের ব্যপারে সাক্ষ্য দিবেন
তাফসীরে মাদারেকে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছেঃ

اَىْ شَاهِدً عَلَى مَنْ اَمَنَ بِالْاِيْمَانِ وَعَلَى مَنْ كُفُرَ بِالْكُفْرِ وَعَلَى مَنْ نَافَقَ بِالنِّفَاقِ

অর্থাৎঃ হুজুর আলাইহিস সালাম মুমিনদের জন্য তাদের ঈমানের কাফেরদের জন্য তাদের কুফরীর জন্য মুনাফিকদের জন্য মুনাফেকীর সাক্ষী।
আয়াত তাফসীর সসূহ দ্বারা বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টির আদিকাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত লোকের কুফর, ঈমান, কপটতা, আমল ইত্যাদি সব কিছুই জানেন। জন্যইতো তিনি সকলের জন্য সাক্ষী। একেইতো বলে ঈলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান

) مَنْ ذَالَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ اِلَّبِاِذْنِه يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ

(কে সে, যে তার কাছে তার অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করবে? তিনি তাদের পূর্বাপর সবকিছুই জানেন।)
তাফসীরে নিসশাপুরেীতে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখ হয়েছেঃ

يَعْلَمُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَابَيْنَ اَيْدِيْهِمْ مِنْ اَوَّلِيَّابِ الْاَمْرِ قَبْلَ الْخَلَائِقِ وَمَا خَلْفَهُمْ مِنْ اَحْوَالِ الْقِيَامَةِ

অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টির আগেকার অবস্থাদি জানেন এবং সৃষ্টির পরে কিয়ামতের যে ভয়াবহ অবস্থাদি সংঘটিত হবে, তা তিনি জানেন।
আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে রূহুল বয়ানে আছঃ

يَعْلَمُ مُحَمَّدٌ عَلَيْهِ السَّلَمُ مَابَيْنَ اَيْدِيْهِمْ مِنَالْاُمُوْرِ الْاَوَّلِيَّاتِ قَبْلَ الْخَلَائِقِ وَمَاخَلْفَهُمْ مِنْ اَحْوَالِ الْقِيَامَةِ وَفَزَعِ الْحَلَقِ وَغَضَبِ الرَّبِّ

অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টির আগের অবস্থা জানেন। সৃষ্টির পূর্বাপর যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত। কিয়ামতের অবস্থা, সৃষ্টিকুলের ভয়ভীত, আল্লাহর গজব ইত্যাদির প্রকৃতি সম্পর্কেও সম্যকরূপে অবগত। আয়াত তাফসীর সমূহ দ্বারা বোঝা গেল, আয়াতুল কুরসীর মধ্যে  مَنْ ذَالَّذِىْ থেকে  اِلَّابِمَا شَاءَ পর্যন্ত হুযুর আলাইহসি সালামের তিনটি গুণের কথাই বিধৃত হয়েছে। বাকী অবশিষ্ট গুণাবলী আল্লাহ সহিত সম্পৃক্ত। আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর নিকট  বিনা অনুমতিতে কেউ সুপারিশ করতে পারে না। যিনি সুপারিশ করার অনুমতি পাপ্ত, তিনি হলেন প্রিয় নবী হুযুর আলাইহিস সালাম। সুপারিশকারীকে পাপীগণের পরিণাম অবস্থা সম্পর্কে অবশ্যই অবগত হতে হয়, যাতে অনুপযুক্তদের জন্য সুপারিশ করা না হয়, আর সুপারিশের উপযুক্ত ব্যক্তিগণ যেন সুপারিশ থেকে বঞ্চিত না হয়। যেমন কোন ডাক্তারের আরোগ্য দুরারোগ্য ব্যাধি সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থকা একান্ত দরকার। এজন্য বলা হয়েছেيَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ
যাকে আমি (আল্লাহ) সুপারিশকারী মোতায়েন করেছি, তাকে সব কিছুর জ্ঞানও দান করছি, কেননা শাফায়াতের কুবরা বা সুমহান সুপারিশের জন্য অদৃশ্য জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
থেকে বোঝা গেল যে, যারা বলে যে হুযুর আলাইহিস সালাম কিয়ামতের মাঠে মুনাফিকদেরকে চিনবেন না, বা হুযুর আলাইহিস সালাম নিজেই জানেন না তাঁর কি পরিণতি হবে ইহা তাদের নিছক ভুল ধারণা ধর্মহীনতা মাত্র। সম্পর্কে সামনে বিস্তারিত আলোচনা হবে

) وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَئْىٍ مِّنْ عِلْمِه اِلَّا بِمَاشَاءَ

অর্থাৎ তারা তাঁর জ্ঞান ভান্ডার থেকে কিছুই পায় না, তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছে করেন।
তাফসীরে রূহুল বয়ানে আয়াতের প্রেক্ষাপটে উল্লেখ আছেঃ
(এও হতে পারে যে উক্ত আয়তের আরবী শব্দের হা (হি) সর্বনাম দ্বারা হুযুর আলাইহিস সালামের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম মানুষের অবস্থা অবলোকন করেন তাদের ভবিষ্যৎ তাদের চরিত্র তাদের আচরণ তাদের ঘটনা প্রবাহ তাদের বিগত অবস্থা তিনি জানেন। পরকালের হালহাকিকত বেহেশতী জাহান্নামী লোকদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিফহাল ওই সমস্ত লোক হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান ভাণ্ডারের কিছুই জানতে পারেন না তবে ততটুকু জানতে পারেন যতটুকু তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লাম) চান। আম্বিয়া কিরামের (আলাইহিস সালাম) জ্ঞানের সামনে আল্লাহর ওলীগণের জ্ঞান হলো সাত সমুদ্রের এক ফোটার সমতুল্য, আর হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের সমনে অন্যান্য আম্বিয়া কিরামের (আলাইহিস সালাম) জ্ঞানও তদ্রূপ। আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আমাদের হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানও তদ্রূপ। অতএব প্রত্যেক নবী রাসূল ওলী নিজ নিজ ধারণ ক্ষমতা যোগ্যতা অনুসারে হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট থেকে আহরণ করেন হুযুর অলাইহিস সালামকে ডিঙিয়ে যাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।)
তাফসীরে খাযেনে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে যে, আল্লাহ তাআলা যাদেরকে তার জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেন তারা হচ্ছেন নবী  রাসুল যাতে তাঁদের অদৃশ্য জ্ঞান নবুয়তের দলীলরূপে পরিগণিত হয় যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয় কারও নিকট প্রকাশ করেন না একমাত্র তার সে রসুলের নিকট প্রকাশ করেন যার উপর তিনি (আল্লাহ) সন্তুষ্ট
তাফসীরে মা আলিমুত তানযীলে উক্ত আয়াতের পেক্ষাপটে উল্লেখিত আছেঃ

يَعْنِىْ لَا يُحِيْطُوْنَ بِشَئٍ مِنْ عِلْمِ الْغَيْبِ اِلَّا بِمَاشَاءَمِمَّا اَخْبَرَ اِلرُّسُلُ

অর্থাৎ সকল লোক অদৃশ্য জ্ঞানকে বেষ্টন বা আয়ত্ত্ব করতে পারে না শুধু ততটুকুই তারা লাভ করে যতটুকু রসুলগণ তাদের নিকট পরিবেশন করেছেন
আয়াত ব্যাখ্যাসমূহ থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে উল্লেখিত আয়াতে হয়তো আল্লাহর জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহর জ্ঞান কারো কাছে নেই, তবে তিনি যাকে জ্ঞান দানের ইচ্ছে করেন, তিনিই অদৃশ্য জ্ঞান অর্জন করে থাকেন আল্লাহ তাআলা নবীগন (আলাইহিস সালাম)কে ইলমে গায়েব দান করেছেন  এবং তাদের  ওসীলায় কোন কোন মুমিন বান্দাকেও দিয়েছেন। অতএব মুমিন বান্দাগনও খোদা প্রদত্ত ইলমে গায়ব লাভ করেছেন। কি পরিমান (ইলমে গায়ব) দেয়া হয়েছে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সামনে করা হবে।
অথবা উল্লেখিত আয়াতে হুজুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান এর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ হুজুর আলইহিস সালামের জ্ঞান কেউ লাভকরতে পারে না অবশ্য তিনি যাকে দিতে চান দান করেন। অতএব আদম (আলাইহিস সালামের)থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যতটুকু জ্ঞান অর্জিত হয়েছে বা হবে উহা হুযুর আলাইহিস  সালামের জ্ঞানসমূহের এক ফোটার সমতুল্য। যার মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম), ফিরিশতা অন্যান্য সৃষ্ট জীবের জ্ঞানও অন্তর্ভুক্ত। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞনের পরিদি সম্পর্কে عَلَّمَ ادَمَ الْاَسْمَاءَ বিশেষ ভাবে আলোচনা করেছি

 

() مَاكَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللهُ
অর্থাৎ হে সাধারন লোকগন এটা আল্লাহর শান নয় তোমাদেরকে ইলমে গায়ব দান করবেন। তবে হ্যাঁ রসুলগনের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করে তাকে অদৃশ্য জ্ঞান দানের জন্য মনোনিত করেন
তাফসীরে বায়যাবী তে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হযেছেঃআল্লাহ তাআলা তোমাদের মধ্যে কাউকে এমন ইলমে গায়ব প্রদান করেন না যাতে তোমরা ঈমান কুফর যা মনে মনে পোষন করা হয়ে থাকে, সে সম্পর্কে অবগত হতে পার। কিন্তু তিনি তার রসুলগনের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে করেন তাদেরকে মনোনীত করেন, তাঁদের উপর প্রত্যাদেশ করেন, তাঁদেরকেই আংশিক গায়ব সম্পর্কে অবহিত করেন, অথবা তাঁদের জন্য এমন কিছু প্রমানাদি উপস্থাপন করেন যা গায়বের পথ নির্দেশ করে থাকে।
তাফসীরে খাযেনে আছে

لَكِنَّ اللهَ يَصْطَفِىْ وَبَخْتَارُ مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يُّشَاءُ فَيُطْلِعُه عَلَى بَعْضِ عِلْمِ الْغَيْبِ

অর্থাৎঃ কিন্ত আল্লাহ রসূলগণের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে করেন, মনোনীত করেন, আংশিক ইলমে সম্পর্কে তাঁদেরকে অবহিত করেন।
তাফসীরে কাবীরে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেখোদা প্রদত্ত অদৃশ্য জ্ঞানের ফলশ্রুতি স্বরুপ সে সমস্ত অদৃশ্যা বিষয়াদি জেনে নেয়া নবীগন (আলাহিস সালাম) এরই বৈশিষ্ট্য। জুমুলে উল্লেখিত আছে

اَلْمَعْنَى لَكِنَّ اللهَ يَجْتَبِىْ اَنْ يَصْطَفِىَ مِنْ رُسُلِه مَنْيَّشَاءُ فَيُطْلِعُه عَلَى الْغَيْبِ

অর্থাৎঃ আয়াতের অর্থ হলোআল্লাহ তাআলা রসুলগনের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তাকে মনোনীত করেন। অতপর তাকে গায়ব সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন।
জালালাইনে উল্লেখ আছেঃ

وَمَاكَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ فَتَعْرِفُوْا الْمُنَافِقَ قَبْلَ التَمَيِّزُ وَلَكِنَّ اللهَ يَجْتَبِىْ وَيَخْتَارُ مَنْ يَّشَاءُ فَيُطْلِعُ عَلى غَيْبِه كَمَا اَطْلَعَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلى حَالِ الْمُنَافِقِيْنَ

অর্থাৎঃ আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে গায়ব সম্পর্কে অবহিত করবেন না যাতে মুনাফিকদেরকে আল্লাহ কর্তৃক পৃথকীকরণের পূর্বেই তোমরা চিনতে না পার, কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তাকে মনোনীত করেন তার অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন যেমন নবী করীম আলাইহিস সালামকে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন।
তাফসীরে রুহুল বয়ানে আছেঃ

فَاِنَّ غَيْبَ الْحَقَائِقِ وَالْاَحْوَالِ لَا يَنْكَشِفُ بِلَا وَالسِطَةِ الرَّسُوْلِ

(অর্থাৎঃ কেননা রসুল আলাইহিস সালামের মাধ্যম ব্যাতিত কারো নিকট অদৃশ্য রহস্যাবৃত অবস্থা মৌলতত্ত প্রকাশ করা হয় না
আয়াত ব্যাখ্যাসমুহ দ্বারা বোঝা গেল যে খোদার খাস ইলমে গায়ব রসূলের নিকট প্রকাশিত হয়। কোন কোন তাফসীরকারক, যে ইলমে গায়বের কিয়দংশের কথা বলেছেন, কিয়দংশ কথাটি দ্বারা আল্লাহর অসীম জ্ঞানের তুলনায় নবীর অদৃশ্য জ্ঞানকে কিঞ্চিত পরিমাণ বলা হয়েছে। কেননা সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে যা কিছু ঘটছে যা ঘটবেএর সম্পূর্ণ জ্ঞানও আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আংশিক বা যৎসামান্যই বটে

 

() وَعَلَّمَكَ مَالَمْ تَكُنْ تَعْلَمْ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيْمًا
(
এবং আপনাকে  শিখিয়ে দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না। আপনার উপর আল্লাহর এটি বড় মেহেরবাণী)
তাফসীরে জালালাইন আয়াতের তাফসীরে লিখা হয়েছেঃ اَىْ مِنَ الْاَحْكَامِ وَالْغَيْبِ যা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) জানতেন না ,তা হচ্ছে ধর্মের অনুশাসন অদৃশ্য বিষয়াদি -(জালালাইন)
তাফসীরে কাবীরে আছেঃ

اَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاطْلَعَكَ عَلى اَسْرَارِهِمَا وَوَافَقَكَ عَلى حَقَائِقِهِمَا

অথাৎঃ আল্লাহ তাআলা আপনার উপর কুরআন হিকমত (জ্ঞানবিজ্ঞান দর্শন) অবতীর্ণ করেছেন, উহাদের গুপ্ত ভেদসমূহ উদ্ভাসিত করেছেন এবং উহাদের হাকীকত  সমুহ সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করেছেন
তাফসীরে খাযেনেউল্লেখিত আছেঃশরীয়তের আহকাম ধর্মীয় বিষয়াদি আপনাকে শিখিয়েছেন বলা হয়েছে যে, আপনাকে ইলমে গায়বের আওতাভূক্ত সে সমস্ত বিষয়াদিও শিখিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না আরও বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হলো আপনাকে রহস্যবৃত, গোপণীয় বিষয়সমূহ শিখিয়েছেন অন্তরের লুকায়িত বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন মুনাফিকদের ধোকাবাজি বাওতাবাজি সম্পর্কে অবহিত করেছেন
তাফসীরে মাদারেকে আছেঃ

مِنْ اُمَوْرُ الدِّيْنِ وَالشَّرَ ائِعِ اَوْمِنْ خَفِيَّاتِ الْاُمُوْرِ وَضَمَائِرِ الْقُلُوْبِ

(দ্বীন শরীয়তের বিষয়সমূহ শিখিয়েছেন আপনাকে  এবং গোপণীয় বিষয়াদি মানুষের অন্তরের গোপণীয় ভেদ ইত্যাদিও শিখিয়ে দিয়েছেন)
তাফসীরে হুসাইনী আয়াতের ব্যাখ্যায় বাহরুল হাকায়েক উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেএটা হচ্ছে পূর্ববর্তী যাবতীয বিষয়ের জ্ঞান যা আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাহিস সালামকে পবিত্র মেরাজ রজনীতে দান করেছিলেন মর্মে মেরাজের হাদীছে উল্লেখিত আছে আমি আরশের নিচে ছিলাম তখন একটি ফোটা আমার কণ্ঠনালীতে ঢেলে দেওয়া হল এর পর আমি অতীত ভবিষ্যতের সমস্ত ঘটনাবলীর জ্ঞান লাভ করলাম )
জামেউল বয়ান তাফসীর গ্রন্থে আছেقَبْلَ فُزُوْلِ ذلِكَ مِنْ حَفِّيِتِ الْاُمُوْرِ অর্থাৎ আপনাকে সে সমস্ত বিষয় আল্লাহ বলে দিয়েছেন যা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার আগে আপনার জানা ছিল না
আয়াত বর্ণিত ব্যাখ্যা সমূহ থেকে বোঝা গেল যে হুযুর আলাহিস সালামকে আতীত ভবিষ্যতের সমস্ত ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল আরবী ভাষায় مَا শব্দটি ব্যাপকতা প্রকাশের নিমিত্তে ব্যবহৃত হয় তাই উক্ত আয়াত থেকে বোঝা গেল যে শরীয়তের বিধি বিধান দুনিয়ার সমস্ত ঘটনাবলী মানুষের ঈমানী অবস্থা ইত্যাদি,যা কিছু তার জানা ছিল  না তাকে  সম্যকরূপে অবগত করান হয় কেবলমাত্র ধর্মীয় বিধানাবলীর জ্ঞান দান করা হয়েছিল আয়াতের এরুপ সীমিত অর্থ গ্রহণ করা মনগড়া ভাবার্থ গ্রহণ করার নামান্তর যা কুরআন হাদীছ উম্মতের আকীদার পরিপন্থী সম্বন্ধে সামনে আলোচনা হবে

() مَافَرَّطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَئْ اِنَّ الْقُرْانَ مُشْتَمِلٌ عَلى جَمِيْعِ الْاَحْوَالِ

আমি কিতাবে (কুরআনে) কিছু বাদ দিইনি কুরআন করীমে সমস্ত অবস্থার বিবরণ রয়েছে
তাফসীরে আনওয়ারুত তনযীলে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃকিতাব শব্দ দ্বার লওহে মাহফুজকেই নির্দেশ করা হয়েছে কেননা লওহে মহফুজে জগতের সমস্ত কিছুই উল্লেখিত, প্রত্যেক প্রকাশ্য, সুক্ষ্ম বিষয় বা বস্তু এমনকি কোন জীব জন্তু বা জড় পদার্থের কথাও বাদ দেয়া হয়নি
তাফসীরে আরায়েসুল বয়ানে আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বলা হয়েছেঃকিতাবে সৃষ্টিকুলের কোন কিছুরই কথা বাদ রাখা হয়নি কিন্তু মারেফতের আলোকে মদদপুষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া তা কারো দৃষ্টি গোচর হয় না
প্রখ্যাত ইমাম শারানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তবকাতে কুবরার মধ্যে লিখেছেন (ইদখালুস সেনান গ্রন্থের ৫৫পৃঃ হতে সংগৃহীত )
(যদি আল্লাহ তাআলা তোমাদের হৃদয়ের তালাবদ্ধ প্রকোষ্টের তালা খুলে দেন তাহলে তোমরা কুরআনের জ্ঞানভাণ্ডারের সন্ধান পাবে এবং কুরাআন ভিন্ন অন্য কিছুর মুখাপেক্ষী হতে হবে না কেননা কুরআনের মধ্যে অস্তিত্ববান সব কিছুই বিধৃত আছে। আল্লাহ তাআলা ফরমান এমন কিছু নেই যা আমি কুরআনে বর্ণনা করিনি )
আয়াতেও এর বর্ণিত তাফসীর সমূহ থেকে বোঝা  গেল যে কিতাবের মধ্যে দুনিয়া আখিরাতের সমস্ত অবস্থার কথা বিদ্যমান আছে। কিতাব বলতে কুরআন বা লওহে মাহফুজকে বোঝানো হয়েছে। কুরআন হোক বা লওহে মাহফুজ হোক উভয়ের জ্ঞান হুযুর আলইহিস সলামের আছে। সম্পর্কে সামনে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ফলস্বরূপ দুনিয়াও আখিরাতের যাবতীয় বিষয় হুযুর আলইহিস সলামের জানা আছে কেননা কুরআন লওহে মাহফুজ সমস্ত জ্ঞানের আধার উভয়টি সম্পর্কে হুযুর পুরনুর (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) ওয়াকিবহাল

() وَلَا رَطَبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّا فِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ

(এবং শুষ্ক আর্দ্র এমন কিছুই নেই, যা উজ্জ্বল কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়নি )
তাফসীরে রূহুল বয়ানে উক্ত আয়াতের তাফসীর এভাবে করা হয়েছেঃউজ্জ্বল কিতাব দ্বারা লওহে মাহফুজের কথাই বলা হয়েছে এতে আল্লাহ তাআলা বান্দার কল্যাণার্থে সম্ভাব্য সকল বিষয় একত্রিত করেছেন। উলামায়ে রব্বানীই এসব বিষয়ে অবগত।
তাফসীরে কাবীরে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে– (লওহে মহফুজে) ধরনের লিখার পিছনে কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে।
প্রথমতঃ আল্লাহ তাআলা ওই সমস্ত বিষয়াদি লওহে মাহফুজে জন্য লিখেছেন যাতে ফিরিশতাগণ সর্বাবস্থায় খোদার ইলম জার হওয়া সম্পর্কে অবগত হন। সুতরাং এটা লওহে মাহফুজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতাগণের জন্য পুরোপুরি শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে পরিণত হয়। কেননা তাঁরা জগতে নিয়ত ঘটমান নতুন নতুন বিষয়কে ওই লিখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন লওহে মাহফুজের লিখার অনুরূপ সবকিছু সংঘটিত হতে দেখতে পান
তাফসীরে খাযেনে আয়াতের ব্যখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে-(দ্বিতীয় অর্থে كِتبٌ مُّبِيْن বলতে লওহে মাহফুজকে বোঝানো হয়েছে। কেননা যা কিছু হবে এবং আসমান যমীন সৃষ্টির পূর্বে যা কিছু হয়েছে আল্লাহ তাআলা সব কিছুর বিবরণ এতে লিখে দিয়েছেন। এসব কিছু লিখার উপকারিতা হলো ফিরিশতাগণ তার আল্লাহর জ্ঞান জারী করার বিষয়ে অবগতি লাভ করতে সক্ষম হন )
তাফসীরে মাদারেকে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে وَهُوَعِلْمُ اللهِ اَوِ الْلَوْحِ অর্থাৎ আয়াতে উল্লেখিত উজ্জ্বল কিতাব  দ্বারা খোদার জ্ঞান বা লওহে মাহফুজকে নির্দেশ করা হয়েছে তাফসীরে তানভীরুল মিকিয়াস ফি তাফসীরে ইবনে আব্বাসে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে– (এসব বিষয় লওহে মাহফুজে উল্লেখিত আছেসে সব কিছুর পরিমাণ সময় উল্লেখিত আছে )
উল্লেখিত আয়াত এর তাফসীর সমূহ থেকে প্রতীয়মান হলো যে লওহে মাহফুজে কঠিন তরল উৎকৃষ্ট প্রত্যেক কিছুর কথা উল্লেখিত আছে। লওহে মাহফুজ সম্পর্কে ফিরিশতা আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ সম্যকরূপে অবগত। যেহেতু এসব হুযুর আলইহিস সলামের জ্ঞানের আন্তর্ভুক্ত সেহেতু সমস্ত জ্ঞান হুযুর আলইহিস সলামের জ্ঞান সমুদ্রের কয়েক ফোঁটা মাত্র

 

(১০) نَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًالِكُلِّ شَئْىٍ
(
হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত )
তাফসীরে হুসাইনীতে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে– (আমি আপনার কছে দ্বীন দুনিয়ার প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় ভরপুর কুরআন অবতীর্ণ করেছি।)
তাফসীরে রূহুল বয়ানে আয়াতের তাফসীরে উল্লেখিত আছেধর্মীয় বিষয় সমূহের সহিত সম্পৃক্ত বিবরণের জন্য (কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে) 
এতে উম্মত তাদের নবীগণের অবস্থা   অন্তর্ভুক্ত
তাফসীরে ইতকানে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছেএকদিন হযরত মুজাহিদ (রহমতুল্লাহে আলাইহে)  বলেছিলেন জগতে এমন কোন জিনিস নেই যার উল্লেখ কুরআনে নেই। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ সরাইখানা সমূহের উল্লেখ কোথায় আছে? তখন তিনি বললেন لَيْسَ عَلَيْكُم جُناحٌ اَنْ تَدْخُلُو بُيُوْتً غَيْرَ مَسْكُوْنَةٍ আয়াতেই উহাদের উল্লেখ আছে। আয়াতটির অর্থ হলোঃ যেসব ঘরে কেউ থাকে না অথচ যেখানে তোমাদের আসবাবপত্র সাজসরঞ্জাম রাখা হয় সে সমস্ত ঘরে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না
আয়াত এর ব্যাখ্যা সমূহ থেকে কথাই বোঝা গেল যে কুরআনের মধ্যে উৎকৃষ্টনিকৃষ্ট প্রত্যেক কিছুর উল্লেখ আছে। আল্লাহ তাআলা তার মাহবুব আলইহিস সলামকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন
সুতরং সমস্ত কিছুই হযরত মুস্তাফা আলইহিস সলামের  জ্ঞানের আওতাধীন

 

(১১)  وَتَفْصِيْلَ الْكِتَابِ لَارَيْبَ فِيْهِ
(
এবং লওহে মাহফুজে যা কিছু লিখা আছে কুরআনে তার বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই )
তাফসীরে জালালাইনে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে কুরআন হচ্ছে শরীয়ত হাকীকতের প্রমাণিত বিষয়সমূহের বিশ্লেষণ। তাবীলাতে নজমিয়া তে উল্লেখিত আছে যে, কুরআনে সে সমস্ত বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, যা অদৃষ্টে আছে, এবং যা সেই কিতাবে (লওহ মাহফুজ) লিপিবদ্ধ রয়েছে, যেখানে কোনরূপ রদবলের অবকাশ নেই। কেননা এটা অনাদি অনন্ত।
উপরোক্ত আয়াত ব্যাখ্যা সমূহ থেকে প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফে শরীয়তের অনুশাসন সমূহ সমস্ত জ্ঞান মওজুদ আছে। আয়াতে থেকে আরও বোঝা গেল যে, কুরআন শরীফে পুরা লওহ মাহফুজের বিস্তারিত বিবরণ আছে আর লওহে মাহফুজ হচ্ছে সমস্ত জ্ঞানের আকর। কুরআনেই উল্লেখিত আছে
وَلَارَطَبٍ وَّلَايَابِسٍ الَّفِىْ كِتَابٍ مُّبِيْن এবং কুরআনে আরও এরশাদ করা হয়েছেاَلرَّحْمنُ عَلَّمَ الْقُرْاَنْ সুতরাং, লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ সমস্ত কিছুর জ্ঞান হুযুর পুর নুর আলাইহিস সালামের রয়েছে। কেননা, কুরআন হচ্ছে লওহ মাহফুজেরই বিবরণ সম্বলিত গ্রন্থ

১২) مَاكَانَ حَدِيْثًا يُفْتَرى وَلكِنَّ تَصْدِيْقَ الَّذِىْ بَيْنَ

( কোন বানোওয়াট কথা নয়, এতে রয়েছে আল্লাহর আগের উক্তি সমূহের সত্যায়ন প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা।)
তাফসীরে খাযেনে আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে
হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম! আপনার নিকট অবতীর্ণ কুরআনে রয়েছে সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হালালহারাম, শাস্তি বিধান, আহকাম, কাহিনী সমূহ, উপদেশাবলী উদাহরণসমূহ, মোট কথা, যা কিছু আপনার প্রয়োজন হয় আর এগুলো ছাড়াও ধর্মীয় পার্থিব কর্মকান্ডের  বান্দাদের যে সমস্ত বিষয়াদি প্রয়োজন হয় সবকিছুর বিবরণ ওই কুরআনেই পাওয়া যাবে। )
তাফসীরে হুসাইনীতে আছেদ্বীনদুনিয়ার প্রয়োজনীয় সবকিছুর বর্ণনা কুরআনের মধ্যে আছে। ইবনে সুরাকা প্রণীত কিতাবুল ইজাযে আছেজগতে এমন কোন কিছু নেই, যা কুরআনের মধ্যে নেই

১৩)  اَلرَّحْمنُ عَلَّمَالْقُرْ اَنْ خَلَقَ الْاِنْسَانَ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

দয়াবান আল্লাহ তাআলা স্বীয় মাহবুবকে কুরআন শিখিয়েছেন মানবতার প্রাণতুল্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সৃষ্টির পূর্বাপর সব কিছুর তাৎপর্য বাতলে দিয়েছেন।)
তাফসীরে মাআলেমুত তানযীল হুসাইনীতে আয়াতে ব্যাখা করা হয়েছে নিম্নরূপ
আল্লাহ তাআলা মানবজাতি তথা মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে পূর্ববতী পরবর্তী সমস্ত  বিষয়ের বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।
তাফসীরে খাযেনে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ
বলা হয়েছে যে, উক্ত আয়াতে ইনসান বলতে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে বোঝানো হয়েছে তাঁকে পুর্ববর্তী পরবর্তী সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে।  কেননা, তাঁকে পূর্ববর্তী পরবর্তীদের কিয়ামতের দিন সম্পর্কে অবহিত করা হেয়েছে
তাফসীরে রূহুল বয়ানে আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা  হয়েছেআল্লাহ তাআলা আমাদের নবী আলাইহিস সালামকে কুরআন স্বীয় প্রভুত্বের রহস্যাবলীর জ্ঞান দান করেছেন, যেমন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ফরমাচ্ছেনوَعَلَّمَكَ مَالَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ সে সব বিষয় আপনাকে শিখিয়েছেন যা আপনি জানতে না।
তাফসীরে মাদারেকে আয়াতে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেইনসাল বলতে মানবজাতি বা আদম (আলাইহিস সালাম) বা হুযুর আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে।)
মায়ালেমুত তানযীলে  আয়াতের ব্যাখ্যায় বল হয়েছে
বলা হয়েছে যে, আয়াতে الِنْسَانُ ইনসান বলতে হুযুর আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে এবং بَيَانُ বয়ান বলতে একথাই বোঝানো হয়েছে যে, তাঁকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।)
তাফসীরে হুসাইনীতে আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছেঅথবা কথা বোঝানো হয়েছে, যে, মহান আল্লাহ হুযুর আলাইহিস সালামের সত্ত্বাকে সৃষ্টি করেছেন, এবং তাঁকে যা কিছু হয়েছে বা হবে সেসমস্ত বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন।
উল্লেখিত আয়াত উহাদের তাফসীর সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, কুরআনের মধ্যে সবকিছু আছে এবং এর পরিপূর্ণ জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে প্রদান করা হয়েছে।
১৪) مَااَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُوْنٍ
(আপনি আপনার প্রভুর মেহেরবাণীতে উম্মাদ নন)
তাফসীর রূহুল বয়ানে আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেআপনার দৃষ্টি থেকে সে সমস্ত বিষয় লুকায়িত নয়, যা সৃষ্টির আদিকালে ছিল, যা কিছু অনন্তকাল পর্যন্ত হতে থাকবে। কেননা جُن শব্দের অর্থ হলো লুকায়িত থাকা। সুতরাং সারমর্ম হচ্ছে যা কিছু হয়েছে সে সব কিছু সম্পর্ক তো আপনি জানেনই, যা কিছু আনাগত ভবিষ্যতে হবে সে ব্যাপারেও আপনি অবগত আছেন।
আয়াত তাফসীর থেকে হুযুর  (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লমা) এর সামগ্রিক অনন্তকাল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত ইলমে গায়বের বিষয়টি প্রমাণিত হলো

১৫) وَلَئِنْ سَأَلَتْهُمْ لَيَقُوْلُنَّ اِنَّمَا كُنَّا نَخُوْضُ وَنَلْعَبُ

এবং হে মাহবুব আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলবে আমরাতো কৌতুক খেলাতামাশা করছিলাম)
তাফসীরে দুররে মনসুর তাবরীতে আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছেঃ
হযরত ইবনে আব্বস রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আয়াত  وَلَئِنْ سَالتَهُمْ الخ অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে যে, জনৈক মুনাফিক বলেছিল যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংবাদ দিচ্ছেন অমুক ব্যক্তির উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলে আটকা পড়েছে। অদৃশ্য বিষয় তাঁর কীই বা জানা আছে?)
আয়াত তাফসরি থেকে একথাই জানা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালামের অদৃশ্য জ্ঞানকে অস্বীকার করা মুনাফিকদেরই কাজ। সেটাকে কুরআন কুফর বলে আখ্যায়িত করেছে

১৬)  فَلَا يُظْهِرُ عَلى غَيْبِه اَحَدًا اِلَّمَنِ ارْتَضى مِنْرَّسُوْلٍ

অর্থাৎ (আল্লাহ পাক) তাঁর মনোনীত রসুলগন ছাড়া কউকেও তাঁর অদৃশ বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন না।
তাফসীরে কবীর আয়াতে ব্যাখ্যায় লিখ হয়েছেকিয়ামত  সংঘটিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়েরে প্রশ্নটি সমস্ত অদৃশ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ তাআলা কারো কাছে প্রকাশ করেননি। যদি কেউ প্রশ্ন করেন আপনি এখানে গায়বকে  কিয়ামত অর্থে ব্যবহার করেছেন, যদি তাই হয় তাহলে আল্লাহ তাআলা কিভাবে ইরশাদ করলেনاِلَّامَنِ ارْتَصى مِنْرَّسُوْلٍ (কিন্তু মনোনীত রসুলগণের নিকট ব্যক্ত করেন) অথচ আপনার কথা মত গায়বটি কারো কাছে প্রকাশ করা হয় না এর উত্তরে আমি বলবো যে, আয়াতের মর্মকথা হচ্ছ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ পাক উক্ত অদৃশ্য বিষয়টি প্রকাশ করবেন।)
তাফসীরে আযীযীর ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছেযে বিষয় সৃষ্টিকুলের অজ্ঞাত বা দৃষ্টি বহির্ভুত, উহা গায়ব মতলাক নামে পরিচিত। যেমন কিয়ামতের সঠিক সময়, প্রত্যেক শরীয়তের বিধিসমূহ সৃষ্টিকুলের দৈনন্দিন শৃংখলা বিধানের রহস্যময় বিষয়সমূহ, আল্লাহ তাআলা খাস গায়ব বলা হয়, তিনি তাঁর খাস গায়ব কারো কাছে প্রকাশ করেন না, তবে তিনি রসুলগণের মধ্যে যাকে পছন্দ করেন, (তিনি ফিরিশতার রসুল হোন বা মানবজাতির রসুল হোন) তাঁকে অবহিত করে থাকেন। যেমন হযরত মুহাম্মদ সুস্তাফা আলাইহিস সালামের কাছে তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয়াদির কিয়দংশ প্রকাশ করে থাকেন।
তাফসীরে খাযেনে আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছেযাদেরকে (আল্লাহ পাক) নবুয়াত বা  রিসালতের জন্য মনোনীত করেন, তাঁদের মধ্যে হেত যাকে উচ্ছা করেন, তাঁর কাছে অদৃশ্য বিষয় ব্যক্ত করেন, যাতে তাঁর অদৃশ্য বিষয়াদির সংবাদ প্রদান তাঁর নবুয়তের সমর্থনে সর্ব সাধারনের নিকট প্রমাণ স্বরূপ গৃহীত হয়। এটাই তাঁর মুজিযারূপে পরিণত হয়।
উক্ত আয়তের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল বয়ানে আছেইবন শাইখ বলেছেনআল্লাহ তাআলা তার পছন্দনীয় রসুল ছাড়া কাউকে তাঁর খাস গায়ব সম্পর্কে অবহিত করেন না তবে তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয়াদি ছাড়া অন্যান্য অদৃশ্য বিষয়াদি রসুল নন এমন ব্যক্তিদেরকেও অবহিত কেরন। িএ আয়াত এর তাফসীরসমূহ থেকে প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ তাআলার খাসইলমে গায়ব, একন কি কিয়ামত কখন হবে সে জ্ঞানও হুযুর পুরনুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দান করা হয়েছে এখন এমন কি জিনিষ আছে, যা হযরত মুস্তফা আলাইহিস সালামের জানার বাকী রইল?

১৭) فَاَوْ حى اِلى عَبْدِه مَااَوْحى

(তিনি (আল্লাহ) তাঁর প্রিয় বান্দার প্রতি যা কিছু ওহী করার ছিল তা ওহী করলেন)
সবিখ্যাত মাদারিজন নবুয়ত গ্রন্থের প্রথম খন্ডে আল্লাহর দর্শন শীর্ষক পরিচ্ছেদ উল্লেখিত আছে
মহা প্রভু আল্লাহ হুযুর আলাইহিস সালামের প্রবিত্র মিরাজের রজনীতে যে সমস্ত জ্ঞান মারিফাত শুভ সংবাদ ইঙ্গিত বিবিধ তথ্য বুযুর্গী, মান সম্মান, পূর্ণতা ইত্যাদি ওহী করেছিলেন সবই অস্পষ্ট বর্ণনায় (যা আয়াতের مااوحاى বাক্যাংশে বর্ণিত হয়েছে) অন্তর্ভুক্ত আছে। সমস্ত বিষয়াদির অথ্যধিক মাহাত্ন্যের করণে সেগুলোকে অস্পষ্টরূপে উল্লেখ করেছেন; সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীনভাবে ব্যক্ত করেননি। এতে কথার প্রতিও ইঙ্গি দেয়া হয়েছে, যে সমস্ত অদৃশ্য জ্ঞান সমূহ খোদা তাআলা তার মাহবুব আলাইহিস সালাম ব্যতীত অন্য কেউ পরিবেষ্টন করতে পারে না। তবে হ্যাঁ যা যতটুকু হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রকাশ করেছেন, ততটুকু জানা গেছে।
আয়াত এর ব্যাখ্যা থেকে বোঝা গেল যে, মিরাজে হুযুর আলাইহিস সালামকে সে সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছিল, যা, যে কারো জন্যে বর্ণনাতীত কল্পনাতীত। ماكَانَ وَمَايَكُوْنَ (যা কিছু হয়েছে হবে) কথাটি শুধু বর্ণনার সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ এর  চেয়ে ঢের বেশী জ্ঞান তাঁকে দান করা হয়েছে

১৮) وَمَاهُوَعَلَى الْغَيْبِ بِضَنِيْنٍ

( নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) গায়ব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন।)
কথা বলা তখনই সম্ভবপর, যখন হুযুর আলাইহিস সালাম গায়বী ইলমের অধিকারী হয়ে জনগণের কাছে তা ব্যক্ত করেন।
মা আলিমুত তানযীল নামক তাফসীর গ্রন্থে আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছেহুযুর আলাইহিস সালাম অদৃশ্য বিষয়, আসমাণী খবর, কাহিনী সমূহ প্রকাশ করার ব্যাপারে কৃপণ নন। অর্থাৎ হুযুর আলাইহস সালাম অদৃশ বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন, তবে উহা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কোনরূপ কাপূর্ণ করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন উহাদের সংবাদ  দেন গণক ভবিষ্যতবেত্তারা যেরূপ খবর গোপণ করে রাখে, সেরূপ তিনি গোপন করেন না।)
তাফসীরে খাযেনে আয়াতের তাফসীরে উল্লেখিত আছে
আয়াতে একথাই বোঝানে হয়েছে যে, হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ আসে। তিনি উহা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কাপূর্ণ করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন।
আয়াত এর তাফসীরের ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালাম লোকদেরকে ইলমে গায়ব শিক্ষা দেন। বলা বাহুল্য যে, তিনি জানেন, তিনিতো শিখিয়ে থাকেন

১৯) وَعَلَّمْنهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا

আমি (আল্লাহ) তাঁকে (হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে) আমার ইলমে লদুনী দান করেছি)
তাফসীরে বয়যাবীতে আয়াতে ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে
হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে এমন বিষয়াদির জ্ঞান দান করেছি, যেগুলো সম্পর্কে শুধু আমিই অবগত, যা আমি না বললে কেউ জানতে পারে না। এটাইতো ইলমে গায়ব।
তাফসীরে ইবনে জারীরে সায়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে– (হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) কে বলেছিলেন আপনি আমার সঙ্গে অবস্থান করলে ধৈর্যধারণ করতে পরবেন না। হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) ইলকে গায়বের অধিকারী ছিলেন বলেই কথাটি পূর্বেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।)
তাফসীরে রূহুল বয়নে আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ– (হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে যে ইলমে লদুনী শিখানো হয়েছিল উহাই ইলমে গায়ব। এবং গায়বের খবর পরিবেশন খোদার ইচ্ছানুযায়ী হয়ে থাকে হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) মতই পোষণ করেছেন।)
তাফসীরে মাদারেকে আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছেঃ

يَعْنِى الْاِخْبَارُ بِالْغَيُوْبِ وَقِيَلَ الْعِلْمُ اللَّدُنِىْ مَاحَصَلَ لِلْعَبْدِ بِطَرِيْقِ الْاِلْهَامِ

অর্থাৎ হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। কেউ বলেছেন ইলমে লদুনী হলো এমন এক বিশেষ জ্ঞান যা বান্দা ইলহামের মাধ্যমে অর্জন করেন।)
তাফসীরে খযেনে আছেঃاَىْ عِلْمَ الْبَاطِنِ اِلْهَامًا
অর্থাৎঃ হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে আমি ইলহামের মাধ্যমে বাতেনী ইলম দান করেছি।
আয়াত তাফসীরের ইবারত সমূহ থেকে বোঝা গেল যে আল্লাহ তআলা হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে ইলমে গায়ব দান করেছিলেন। থেকে হুযুর আলাইহিস সালামকে ইলমে গায়ব দান করার বিষয়টি অপরিহার্যরূপে স্বীকৃত হয়। কেননা খোদার সৃষ্টিকূলের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক জ্ঞানী আর হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) সৃষ্টিকূলের অন্তর্ভুক্ত

(২০) وَكَذَلِكَ نُرِىَ اِبْرَ اهِيْمَ مَلَكُوْت السَّموتِ وَالْاَرْضِ

(আমি রূপেই হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামকে  ভূ মণ্ডল নভোমন্ডলে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহী অবলোকন করাই।
তাফসীরে খযেনে আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে রূপ– (হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামকে একটি প্রস্তর খণ্ডের উপর দাড় করানো হয়েছিল এবং তার জন্য আসমান খুলে দেয়া হয়েছিল। তখন তিনি আসমান সমূহে বিরাজমান সবকিছুই এমনকি আরশ কুরসি পর্যন্ত অবলোকন করেছিলেন। অনুরূপভাবে যমীনকেও তার দৃষ্টিসীমায় নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তিনি যমীনের সর্বনিম্নস্তর পর্যন্ত যমীনের স্তর সমূহে বিদ্যমান বিস্ময়কর সবকিছুই স্বচক্ষে দেখেছিলেন
তাফসীরে মদারেকে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-(হযরত মুজাহিদ (রদিআল্লাহু আনহু) বলেছেনঃ হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামের নিকট সপ্ত আসমান উন্মুক্ত করা হয়েছিল তখন তিনি আসমান সমূহের মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুই দেখতে পান এমনকি আরশ পর্যন্ত তার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। অনুরূপভাবে তার নিকট সপ্ত যমীন উন্মুক্ত করা হয়। তখন তিনি যমীনের স্তর সমূহে বিদ্যমান সবকিছুই দেখতে পান।)

 

তাফসীরে হুসাইনীতে আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেআমি হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামকে আসমান যমীনের অদ্ভুত বিস্ময়কর সবকিছুই দেখিয়ে দিয়েছি। তার নিকট আরশের সুউচ্চ স্তর থেকে তাখতআছছরা পর্যন্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
তাফসীরে ইবন জারীর ইবন আবী হাতেমে আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছেঃ-( হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালামের কাছে প্রকাশ্য গোপনীয় সবকিছুই উদ্ভাসিত হয়েছিল। সুতরাং, সে সময় সৃষ্টিকূলের কোন আমলই তাঁর নিকট গোপন ছিল না।)
তাফসীরে কাবীরে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে– (আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্য আসমান সমূহকের বিদীর্ণ করে দিয়েছিলেন। ফলে তিনি আরশকুরসী, এমনকি স্থূল জগতের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত দখেছিলেন। আসমান সমূহে বিরাজমান সব কিছুই তার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল, যমীনের তলদেশে বিদ্যমান উদ্ভূত বিষ্ময় উদ্রেককর সবকিছুই সুস্পষ্টরূপে তাঁর নিকট প্রতিভাত হয়েছিল।)
আয়াত উল্লেখিত তাফসীরের ইবারত সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, আরশ থেকে তাখতঅছছরা পর্যন্ত সমস্ত কিছুই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে দেখানো হয়েছিল, এবং সৃষ্টিকূলের বিবিধ আমল সম্পর্কেও তাঁকে অবগত করানো হয়েছিল। হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান তাঁর তুলনায় অনেক বেশী বিধায় একথা বিনা দ্বিধায় স্বীকার করতে হয় যে, ব্যাপক জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালাকেও দান করা হয়েছে।
স্মরণ রাখ দরকার যে, আরশের জ্ঞান বলতে লওহে মাহফুজও তাঁর আওতাভুক্ত হয়ে পড়ে। আর লওহে মাহফুজের কি  কি লিখা আছে সে সম্পের্কে আমি আগে আলোচনা করেছিল সুতরাং, পূর্ববর্তী পরবর্তী সবকিছুর জ্ঞান হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এরও ছিল, আর হযরত ইব্রাহীম হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞান হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোঁটার সমতুল্য।
হযরত ইউসুফ (আঃ) বলেছিলেন

২১) لَا يَا تِيْكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِه اِلَّا نَبَّئْتُكُمَا بِتَاوِيْلِه

অর্থাৎ তোমাদের কাছে কাবার আসার আগে এর বিবরণ বলে দিতে পারবো।
তাফসীরে রূহুল বয়ান কবীর খাযেনেএর তাফসীরে উল্লেখিত আছে আমি তোমাদেরকে বিগত আনাগত দনেরর খাওয়াদাওয়ার যাবতীয় অবস্থা বলে দিতে পারি। বলতে পারি খাদ্যশস্য কোথা হতে আসলো এবং এখন কোথায় যাবে। তাফসীরে কাবীরে আরও উল্লেখ করেছে আমি বলতে পারি, খাবার গ্রহণের ফলে উপকার হবে, না ক্ষতি হবে। সমস্ত বিষয়ে সম্পর্কে তিনিই বলতে পারেন, যিনি প্রতিটি অনুপরমানুর খবর রাখেন।
তিনি (হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম) আরও বলেন ذلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِىْ رَبِّىْ এটা আমার জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্র। তাহলে এখন বলুন হুযুর আলাইহসি সালামের জ্ঞনের পরিধি কতটুকু বিস্তৃত। হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞান হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমূ্দ্রের  এক বিন্দু মাত্র।
হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) ফরমানوَاُنَبِّئُكُ بِمَا تَأكُلُوْنَ وَمَاتَدَّخِرُوْنَ فِىْ بُيُوْتِكُمْ  তোমরা নিজ নিজ ঘরে যা কিছু খাও এবং যা কিছু সঞ্চিত রাখ, আমি তোমাদেরকে বলে দিতে পারি।)
দেখুন, ঘরের মধ্যে আহার করা হল, ঘরের মধ্যে জমা করা হল, সেখানে হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু বাহির থেকে তিনি সংবাদ দিচ্ছেন। একেই বলে ইলমে গায়ব।
শেষকাথাঃ বিরুদ্ধবাদীগণ এসব দলীল প্রমাণাদির কোন উত্তর দিতে পারেন না। তারা কেবল প্রত্যুত্তরে এর কথাই বলেন যে যেই সব আয়াতে كُلُّ شَيْئٍ  উল্লেখিত আছে বা مَالَمْ تكن تَعْلَمْ বলা হয়েছে, সে সকল ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধি বিধানের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে, অন্য কোন কিছুর জ্ঞান বোঝানো হয়নি

এর সমর্থনে তারা নিম্নলিখিত দলীলাদি উপস্থাপন করেন
) كُلُّ شَىْئٍ বলতে সীমাহীনতা বোঝায় এবং সীমাহীন বিষয়ের জ্ঞান খোদা ছাড়া অন্য কারো আয়ত্ত্বে থাকা তর্কশাস্ত্রের শৃংখল পরস্পরের অসীমতা অনুসারে সম্পূর্ণরূপে বাতিল বলে গণ্য (যুক্তিশাস্ত্রের তাসালসুল নামক দলীল দ্রষ্টব্য।)
) অনেক তাফসীরকারকগণ كُلُّ شَيْئٍ এর ব্যাখ্যা করেছেনঃ আরবী (অর্থৎ ধর্মীয় বিষয়াদ) যেমন তাফসীরে জালালাইনে অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থে এরূপ ব্যাখ্যাই প্রদান করা হয়েছে।
() কুরআন শরীফের অনেক জায়গায় كُلُّ شَيْئٍ বলা হয়েছে কিন্তু উহার দ্বারা কিয়দাংশ বা কিয়ৎ পরিমাণ বোঝানো হয়েছে। যেমন রাণী বিলকিস সম্পর্কে  وَاُوْتِيَتْ مِنْ كُلِّ شَيْئٍ  (অর্থাৎ বিলকিসকে সব কিছুই দেয়া হয়েছে) বলা হয়েছে অথচ বিলকিসকে প্রদত্ত বস্তু বা বিষয়ের কিছু বা কিঞ্চত পরিমাণই দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু এগুলো কোন দলীলই নয়।  নিছক ভুল ধারণা ধোকা  মাত্র এগুলোর উত্তর নিম্নে দেয়া গেল
আরবী ভাষায় كُلّ مَا    শব্দদ্বয় ব্যাপকতা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কুরআন শরীফের প্রত্যেকটি শব্দ অকাট্য। এতে মনগড়া কোন শর্ত জুড়ে দিয়ে শব্দকে সীমিত অর্থে প্রয়োগ করা জায়েয নয়। কুরআন শরফের ব্যাপকতা নির্দেশক শব্দগুলোকে হাদীছে আহাদ দ্বারা সীমিত অর্থে গ্রহণ করা যায় না এমতাবস্থায় নিজস্ব কোন যুক্তি বা রায়ের ভিত্তিতে সীমিত অর্থে প্রয়োগের প্রশ্নই উঠে না।
() كُلُّ شَيْئٍ বলতে সীমাহীনতা বোঝা যায় না বরং দ্বারা সীমাবদ্ধতাই বোঝা যায় তাফসীরে কবীরে এর ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঅর্থাৎ এতে কোন সন্দেহ নেই যে সংখ্যা দ্বারা ণনার বিষয়াটি সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রেই সম্ভবপর কিন্তু كُلُّ  شَيْئٍ (প্রত্যেক জিনিস) শব্দ দ্বারা বস্তুর সীমাহীনতার অর্থ প্রকাশ পায় না। কেননা আমাদের মতে شَيْئ  (জিনিস)  বলতে যা কিছুর অস্তিত্ব আছে, শুধু তাই বোঝায় এবং যাবতীয় অস্তিত্ববান বস্তু সীমাবদ্ধতার গন্ডীতে আবদ্ধ।
তাফসীরে রূহুল বয়ানে একই আয়াতে ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিপিবদ্ধ আছে আয়াত দ্বারা কথাটির বড় প্রমাণ মিলে যে যা কিছু অস্তিত্বহীন উহা  شَيْئ  বস্তু বলে গণ্য নয়।  কেননা যদি এটা বস্তু (অস্তিত্ববান) বলে গণ্য হয়, তাহলে অস্তিত্ববান সবকিছুই সীমাহীন হয়ে যায়। অথচ বস্তুসমূহ গণনা বা শুমারীর আওতাভুক্ত এবং যা কিছু গণনার আওতায় আসে, উহা কেবল সীমাবদ্ধতার পর্যায়ভুক্ত হতে  পারে।
) তাফসীরকারকদের মধ্যে অনেকেই كُلُّ شَىْئٍ বলতে কেবল শরীয়তের আহাকামকে ধরে নিয়ছেন বটে, কিন্তু আবার অনেকেই সম্পুরণীয় বা সামগ্রীক ইলমে গায়েবের প্রতি নির্দেশ করেছেন। চিরাচরিত নিয়ামানুযায়ী যখন কিছু প্রমাণ ইতবাচক আর কিছু নেতিবাচক হয়, তখন ইতবাচক প্রমাণগুলিই গৃহীত হয়।
সুবিখ্যাত নুরুল আনোয়ার গ্রন্থে تَعَارُضْ  (অসঙ্গতি বা বিরোধ) শীর্ষ আলোচনায় উল্লেখিত আছে وَالْمُثْبِتُ اَوْلى مِنَ النَّافِىْ অর্থাৎ স্বীকৃতি জ্ঞাপক প্রমাণ অস্বীকৃতি নির্দেশক প্রমাণ হতে অপেক্ষকৃত উত্তম। যে সমস্ত তাফসীরের উদ্ধৃতি আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, সে গুলোতে যেহেতু বেশীরভাগ প্রমাণই স্বীকৃতি সূচক, কাজেই উহাই গ্রহণযোগ্য। অধিকন্তু স্বয়ং হাদীছ সু্প্রসিদ্ধ উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ দ্বারা এর তাফসীর করে আমি দেখাবো যে এমন কোন অনুপরমাণূ নেই, যা হুযুর পুর নুর (সাল্লাল্লাহু অলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর জ্ঞানানুভুতিতে আসেনি, এবং আমি গ্রন্থেরই পেশ কালাম শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি যে, কুরআনের হাদীছ ভিত্তিক তাফসীর অন্যান্য তাফসীর সমূহ থেকে উন্নত। সুতরাং, হাদীছের সমর্থনপুষ্ট তাফসীরেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে। এও উল্লখ্যে যে, যে সকল তাফসীরকারকكُلُّ شَيْئٍ এর তাফসীরে আহকামে দ্বীনকে বোঝাতে চেয়েছেন, তারাওতো অন্যান্য বিষয় বা বস্তুর সম্পর্কীয় জ্ঞানের অস্বীকৃতির কথা বলেননি। সুতরাং, আপনারা অস্বীকৃতির কথা কোথা থেকে আবিষ্কার কলেন? কোন বিষয়ের উল্লেখ না করলে যে সে বিষয়ের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়, কথা বলেন কিভাবে? কুরআন শরীফে আছتَقِيْكُمَ الْحَرَّ  তোমাদের কাপড় তোমাদেরকে উত্তাপ থেকে রক্ষা করে। এরূপ উক্তি থেকে কি একথা বোঝা যাবে যে, কাপড় আমাদেরকে শীত থেকে রক্ষা করে না? কথাতো কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি। অধিকন্তু, দ্বীন বললেও সবকিছুকে বোঝায়। জগতে এমন কি বিষয় আছে, যার উপর দ্বীনের আহকাম হালালহারাম ইত্যাদি প্রযোজ্য হয় না? সকল মুফাসসিরতো অভিমতই ব্যক্ত করেছেন যে দ্বীনি ইলম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে একথা বললে সব কিছুর জ্ঞানকে বোঝানো হয়।
) বিলকীস অন্যান্যদের কাহিনীতে যে كُلُّ شَيْئٍ  বলা হয়েছে, সেখানে এমন আলামত বা লক্ষণ মওজুত আছে, যার ফলে একথা পরিষ্কাররূপে প্রতীয়মান হয় যে, كُلُّ شَيْئٍ  দ্বারা রাজত্বের কাজ কারবার সম্পর্কীয় প্রত্যেক কিছুই বোঝানো হয়েছে। সেখানে উক্ত শব্দ দ্বারা ব্যবহারিক অর্থের দিকে নির্দেশ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে এমন কি লক্ষণ আছে, যে কারণে শব্দের আসল অর্থ বাদ দিয়ে তার ব্যবহারিক অর্থই করা যাবে?
আরও লক্ষ্যণীয় যে, কুরআন করীম সেখানে হুদহুদ পাখীর উক্তিকে নকল করেছে মাত্র হুদহুদ বলেছিল وَاُوْتِيْتْ مِنْ كُلِّ شَيْئٍ   অর্থাৎ বিলকিসকে প্রত্যেক কিছুই দেয়া হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা খবর দেননি হুদহুদের ধারণা ছিল যে বিলকিস সারা দুনিয়ার সবকিছুই পেয়ে গেছেন। কিন্তু এখানে মুস্তফা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেتِبْيَا نً لِكُلِّ شَيْئٍ  (প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত) 
হুদহুদ ভুল বলতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কালামতো ভুল হতে পারে না। হুদহুদতো আরও বলেছিল وَلَهَا عَرْشٌ عَظِيْمٌ  (তাঁর এক বিরাট আরশ আছে) তাহলে বিলকিসের সিংহাসন কি আরশ আযীমই ছিল? বস্তুতঃ কুরআনের অন্যান্য আয়াত থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, كُلُّ شَيْئٍ  দ্বারা এখানে জগতের সবকিছুকেই বোঝানো হয়েছে, কুরআনেই ইরশাদ হয়েছেঃ

وَلَا رَطْبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّفِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ

(অর্থাঃ আর্দ্র শুষ্ক এমন কোন জিনিস নেই, যা লওহে মাহফুজে বা কুরআনে করীমে নেই।
ছাড়া সামনে উল্লেখিত বিভিন্ন হাদীছ, উলামা মুহাদ্দীনের উক্তি থেকেও কথার জোরালো সমর্থন পাওয়া যাবে যে জগতের প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান হুযুর পুরনুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে দান করা হয়েছিল।
আমি ইনশাআল্লাহ হাযিরনাযির শিরোনামের আলোচনায় বর্ণনা করবো যে মৃত্যুর ফিরিশতা হযরত আযরাইল (আলাইহিস সালাম) এর সামনে সারা জগৎটাই যেন একটা তালার মত। আর ইবলীস এক পলকে সারা পৃথিবী ঘরে আসে। কথা দেওবন্দীগণ স্বীকার করেন যে আমাদের নবী আলাইহিস সালামের জ্ঞান সৃষ্টিকুলের সামগ্রিক জ্ঞান থেকে বেশী। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, হুযুর আলাইহিস সালামের সমগ্র সৃষ্টির জ্ঞান রয়েছে। আমি পঞ্চ বিষয়ের জ্ঞান علوم خمسه শীর্ষ আলোচনায় হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) তাকদীর লিখায় নিয়োজিত ফিরিশতা জ্ঞান সম্পর্কে আলোকপাত করবো, যা দ্বারা বোঝা যাবে যে গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চ ভিষয়ের জ্ঞান তাদেরও রয়েছে। যেহেতু হুযুর আলাইহিস সালাম সমস্ত সৃষ্টিকূল থেকে বেশী জ্ঞানী, কাজেই হুযুর আলাইহিস সালাম যে এসব বিষয়ের জ্ঞান বরং তার চেয়ে অধিক জ্ঞানের অধিকারী একথা মেনে নিতে হবে বৈ কি। আমাদের দাবী সর্বাবস্থায় প্রতিষ্ঠিত।
وَلِلهِ الْحَمْدُ (আল্লাহ যাবতীয় প্রশংসার অধিকরী) –সূত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড

) বুখারী শরীফের بَدْءِ الْخَلْقِ শীর্ষক আলোচনায় মিশকাত শরীফের দ্বিতীয় খণ্ডের بَدْءِ الْخَلْقِ وَذِكْرُ الْاَنْبِيَاءِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উমর (রাদিয়াআল্লাহু আনহু) থেকে বর্নিতঃ

قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَاَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ لْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ اَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِ لَهُمْ وَ اَهْلُ النَّارِ مَنَازِ لَهُمْ حَفِظَ ذلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ

অর্থাৎঃ হুযুর আলাইহিস সালাম এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করেছিলেন সেখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে আদি সৃষ্টির সংবাদ দিচ্ছিলেন এমন কি বেহেশতবাসী দোযখবাসীগণ নিজ নিজ মনযিলে বা ঠিকানায় পোঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ঘটনাবলীর বর্ণনা প্রদান করেন। যিনি ওসব স্মরন রাখতে পেরেছেন তিনি তো স্মরন রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।
এখানে হুযুর আলাইহিস সালাম দুধরনের ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেনঃ
) বিশ্ব সৃষ্টির সূচনা কিভাবে হলো এবং
) এর সমাপ্তি কিভাবে হবে।
অর্থাৎ রোযে আযল (সৃষ্টির ঊষালগ্ন) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক অণুপরমাণুর পুঙ্খাণুপুঙ্খরূপে বর্ননা দিয়েছেনঃ

 

) মিশকাত শরীফের اَلْمُعْجِزَاتِ অধ্যায়ে মুসলিম শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে আযর ইবনে আখতাব থেকে একই কথা বর্নিত, তবে এতে এতটুকু অতিরিক্ত আছেঃ

فَاَخْبَرْنَا بِمَاهُوْ كَائِنٌ اِلى يَوْمِ الْقِيَمَةِ فَاعْلَمْنَا اَخْفَظُنَا

(আমাদেরকে সেই সমস্ত ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেন যে গুলো কিয়ামত পর্যন্ত ঘটতে থাকবে। আমাদের মধ্যে সব চেয়ে আলিম হলেন তিনি, যিনি সব বিষয়াদি সর্বাধিক স্মরন রাখতে পেরেছেন।)

 

) মিশকাত শরীফের اَلْفِتنٌ শীর্ষক অধ্যায়ে বুখারী মুসলিম শরীফের বরাত দিয়ে হযরত হুযাইফা (রাদিয়াআল্লাহু আনহু) থেকে বর্নিত হয়েছেঃ

مَاتَرَكَ شَيْأً يَكُوْنُ فِىْ مَقَامِه اِلَى يَوْمِ الْقِيمَةِ اِلَّا حَدَّثَ بِه حَفِظَهُ مَنْ حَفِطَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيْهُ

অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম সে জায়গায় কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, সব কিছুর খবর দিয়েছেন, কোন কিছুই বাদ দেননি। যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা সব স্মরন রেখেছেন, আর অনেকে ভুলেও গেছেন

 

) মিশকাত শরীফের ফযায়েলে সায়্যিদুল মুরসালীন শীর্ষক অধ্যায়ে মুসলিম শরীফের বরাত দিয়ে হযরত সওবান (রাদিয়াআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

اِنَّ اللهَ زَوى لِىَ الْاَرْضَ فَرَءَيْتُ مَشَارِقَ الْاَرْضِ وَمَغَارِبَهَا

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে গোটা পৃথিবীকে এমনভাবে সঙ্কুচিত করেছেন, যে আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত পশ্চিমপ্রান্ত সমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করেছি

 

() মিশকাত শরীফের মাসাজিদ অধ্যায়ে  হযরত আবদুর রহমান ইবন আয়েশ (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃআমি আল্লাহ তাআলাকে সুন্দরতম আকৃতিতে দেখেছি। তিনি স্বীয় কুদরতের হাতখানা আমার বুকের উপর রাখলেন, যার শীতলতা আমি স্বীয় অন্তঃস্থলে অনুভব করেছি। ফলে, আসমান যমীনের সমস্ত বস্তু সম্পর্কে অবগত হয়েছি

 

() শহরে মাওয়াহেবে লদুনিয়ায় (হযরত আল্লামা যুরকানী (রহতুল্লাহে আলাইহে) প্রণীত) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত আছেঃ

اِنَّ اللهَ رَفَعَ لِىْ الدُّنْيَا فَاَنَا اَنْظُرُ اِلَيْهَا وَاِلى مَهُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلى يَوْمِ الْقِيَمَةِ كَاَنَّمَا اَنْظُرُ اِلَى كَفِّىْ هذَا

অর্থাৎঃ আল্লাহ তাআলা আমার সামনে সারা দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। তখন আমি দুনিয়াকে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যাকিছু হবে এমন ভাবে দেখতে পেয়েছি, যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি

 

() মিশকাত শরীফের মাসাজিদ অধ্যয়ে তিরমিযী শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত  আছেঃ فَتَجَلَّى لِىْ كُلُّ شَيْئٍ وَعَرَفْتُ (তখন প্রত্যেক কিছু আমার কাছে উন্মুক্ত হয়েছে এবং আমি এগুলো চিনতে পেরেছি।)

 

() মসনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলে হযরত আবুযর গিফারী (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ

لَقدْ تَرَكْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ وَما يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ اِلَّا ذَكَرَلَنَا مِنْهُ عِلْمًا

(হুযুর আলাইহিস সালাম আমাদেরকে এমনভাবে অবহিত করেছেন যে, একটা পাখীর পালক নড়ার কথা পর্যন্ত তার বর্ণনা থেকে বাদ পড়েনি

 

() মিশকাত শরীফের ফিতনা নামক অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে হযরত হুযাইফা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ– (হুযুর আলাইহিস সালাম পৃথিবীর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য কোন ফিতনা পরিচালনাকারীর কথা বাদ দেননি যাদের সংখ্যা তিনশত কিংবা ততোধিক হবে এমন কি তাদের নাম তাদের বাপের নাম গোত্রের নামসহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন।)

 

১০) মিশকাত শরফের ذِكْرُ الْاَنْبِيَاءِ শীর্ষক অধ্যয়ে বুখারী শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ

حُفِّفَ عَلى دَاؤُدَ الْقُرْاَنُ فَكانَ يَأمُرُ دَوَاَبَّة فَتُسْرَجُ فَيَقْرَءُ الْقُرْانَ قَبْلَ اَنْ تُسْرَجَ

(হযরত দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর জন্য কুরআনকে (যবুর গ্রন্থ) এমনভাবে সহজ করে দেয়া হয়েছিল যে, তিনি নিজ ঘোড়াদেরকে যীন দ্বারা সজ্জিত করার হুকুম দিতেন আর ইত্যবসরে তিনি যীন পরানোর আগেই যবুর শরীফ পড়ে ফেলতেন)
হাদীসটি এখানে জন্যই বর্ণনা করা হলো যে যদি হুযুর আলাইহিস সালাম একই ভাষণে সৃষ্টি আদ্যোপান্ত যাবতীয় ঘটনাবলী বর্ণনা করে থাকেন তাহলে এও তার মুজিযা ছিল, যেমন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এক মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ যবুর শরীফ পড়ে ফেলতেন

 

১১) মিশকাত শরীফের مَنَاقِبِ اَهْلُ الْبَيْتِ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছেঃ

تَلِدْ فَاطِمَةُ اِنْ شَاءَ اللهُ غُلَامًا يَكُوْنُ فِىْ حَجْرِكَ

অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম হযরত উম্মুল ফযল (রাদিআল্লাহু আনহু) এর নিকট ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, হযরত ফাতিমা যুহরা (রাদিআল্লাহু আনহু) এর ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে, সে তোমারই (হযরত উম্মুল ফযল (রহমতুল্লাহে আলাইহে) কোলে লালিত পালিত হবে

 

১২) বুখারী শরীফে اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত ইবনে আব্বাস (রহমতুল্লাহে আলাইহে) থেকে বর্ণিত আছেঃ– (হুযুর আলাইহিস সালাম একদা দুটো কবরের পার্শ্বে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কবর দুটোতে আযাব হচ্ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ দুজনের আযাব হচ্ছে কিন্তু কোন গুরুতর অপরাধের জন্য নয়। তাদের মধ্যে একজন প্রশ্রাবের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতো না। অপরজন চোগলখুরী করে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি করত। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) খেজুরের একটি কাঁচা ডাল নিয়ে তা দুভাগে ভাগ  করলেন অংশ দুটো উভয় কবরে একটি করে পুঁতে দিলেন এবং ইরশাদ করলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ডাল দুটো শুকিয়ে না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের শাস্তি লাঘব হবে

 

(১৩) বুখারী শরীফেরكِتَابُ الْاِعْتِصَامِ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ খাযেনে لَا تَسْئَلُوْا عَنِ الْاَشْيَاءِ اِنْ تُبْدَ لَكُمْ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে– (একদিন হুযুর আলাহিস সালাম মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন। অতপর কিয়ামতের উল্লেখপূর্বক এর আগে যে সমস্ত ভয়ানক ঘটনাবলী ঘটবে, সে সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন। এরপর  তিনি  রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, যার যা খুশি জিজ্ঞাসা করতে পার। খোদার শপথ, জায়গা অর্থাৎ মিম্বরে আমি যতক্ষণ দন্ডয়মান আছি, ততক্ষণ তোমরা যা জিজ্ঞাসা কর না কেন, আমি অবশ্যই উত্তর দেব। জনৈক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আরয করলেন, পরকালে আমার ঠিকানা কোথায়? ইরশাদ ফরমালেন জাহান্নামের মধ্যে।
আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন আমার বাপ কে? ইরশাদ করেন, হুযাফা। এর পর তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বার বার ইরশাদ ফরমান, জিজ্ঞাসা করো, জিজ্ঞাসা করো।
মনে রাখা দরকার যে কারো জাহান্নামী বা জান্নাতী হওয়া সম্পর্কে জানা পঞ্চ জ্ঞানের (علوم خمسه) অন্তর্ভূক্ত। সৌভাগ্যবান কিংবা হতভাগা হওয়ার বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞানও পঞ্চ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ কে কার ছেলে সম্পর্কিত জ্ঞানও উক্ত পঞ্চ বিষয়ের জ্ঞানের আওতাভূক্ত। অধিকন্তু এটা এমন একটি বিষয়, যা শুধু ব্যাক্তি বিশেষের মা ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। তাঁর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামএহেন দৃষ্টির জন্য সবকিছু্ই উৎসর্গকৃত, যে দৃষ্টিতে আলোঅন্ধকার, দুনিয়াআখিরাত সবকিছুই দৃষ্টিগোচর হয়

 

১৪)  মিশকাত শরীফের مناقب على  অধ্যায়ে বর্ণিত আছেঃ

قَلَ يَوْمَ خَيْبَرَ لَاُ عْطِيَنُّ هذِهِ الرَّايَةَ غَذًا رَجُلًا يَقْتَحُ اللهُ عَلَى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ

(হুযুর আলাইহিস সালাম খায়বরের যুদ্ধের দিন ইরশাদ ফরমানঃ আমি আগামী দিন পতাকা এমন ব্যাক্তিকে অর্পণ করবো, যার হাতে আল্লাহ তাআলা খায়বরের বিজয় নির্ধারণ করেছেন। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি আল্লাহ তাঁর রসুলকে ভালবাসেন।)

 

১৫) মিশকাত শরীফের মাসাজিদ অধ্যায়ে হযরত আবুযর গিফারী (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে

عُر ضَتْ عَلَىَّ اَعْمَالُ اُمَّتِىْ حَسَنُهَا وَسَيِّئُهَا فَوَجَدْت فِىْ مَحَاسِنِ اَعْمَالِها الْاَذَى يُمَاطُ عَنِ الطَّرِيْقِ

(আমার সামনে আমার উম্মতের ভালমন্দ সমূহ পেশ করা হয়েছে। আমি তাদের নেক আমল সমূহের মধ্যে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সমূহ অপসারনের মত পূণ্য কাজও লক্ষ্য করেছি

 

১৬) মুসলিম শরীফের كتاب الجهاد ২য় খন্ডের বদরের যুদ্ধ শীর্ষক অধ্যয়ে হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)থেকে বর্ণিত আছে– (হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমান এটা অমুক ব্যক্তির নিহত হয়ে পতিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট স্থান এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) তার পবিত্র হস্ত মোবারক যমীনের উপর এদিক সেদিক সঞ্চালন  করছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, নিহত ব্যাক্তিদের মধ্যে কেউ হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর হাতের নির্দেশিত স্থানের কিঞ্চিত বাহিরেও পতিত হয়নি।)
লক্ষণীয় যে, কে কোন জায়গায় মারা যাবে বিষয়ে পঞ্চ জ্ঞানের علوم خمسة অন্তর্ভুক্ত, যার সংবাদ বদর যুদ্ধের একদিন আগেই হুযুর আলাইহিস সালাম দিচ্ছিলেন

 

(১৭) মিশকাত শরীফের মুজিযাত অধ্যায়ে হযরত আবু হোরায়রা (রাদিয়াআল্লাহ আনহু) থেকে বর্ণিত আছে

فَقَالَ رَجُلُ تَاللهِ اِنْ رَئَيْتُ كَالْيَوْمِ ذِئْبٌ يَتَكَلَّمُ فَقَالَ الذِّئْبُ اَعْجَبُ مِنْ هذَا رَجُلٌ فِى النَّخْلَاتِ بَيْنَالْحَرَّتَيْنِ يُخْبِرُ كُمْ بِمَا مَضى وَمَاهُوَ كَائْنٌ بَعْدَكُمْ

জনৈক শিকারী আশ্চর্য হয়ে বললো নেকড়ে বাঘকে আজ যেরুপ কথা বলতে দেখলাম সেরুপ ইতিপূর্বে আর কখনো দেখিনি। তখন নেকড়ে বাঘ বলে উঠলো এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো দুই উন্মুক্ত প্রান্তরের মধ্যবর্তী মরুদ্যানে (মদিনায়) একজন সম্মানিত ব্যাক্তি (হুজুর আলাইহিস সালাম) আছেন,  যিনি তোমাদের নিকট বিগত অনাগত ভবিষ্যতের বিষয় সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশন করেন

 

(১৮) তাফসীরে খাযেনের ৪র্থ পারায় مَاكَانَ اللهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلى مَااَنْتُمْ عَلَيْهِ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছেঃ
(
হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমানঃ আমার কাছে আমার উম্মতকে তাদের নিজ নিজ মাটির আকৃতিতে পেশ করা হয়েছে, যেমনভাবে আদম (আলাইহিস সালামের)কাছে পেশ করা হয়েছিল। আমাকে বলে দেয়া হয়েছে কে আমার উপর ঈমান আনবে, আর কে আমাকে অস্বীকার করবে। যখন খবর মুনাফিকদের নিকট পৌছল তখন তারা হেসে বলতে লাগলো হুযুর আলাইহিস সালাম ওসব লোকদের জন্মের আগেই তাদের মুমিন কাফের হওয়া সম্পর্কে অবগত হয়ে গেছেন অথচ আমরা তার সাথেই আছি কিন্ত আমাদেরকে চিনতে পারেন নি। খবর যখন হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট পৌছলো তখন তিনি মিম্বরে উপর দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে ইরশাদ ফরমানঃ এসব লোকদের কি যে হলো, আমার জ্ঞান নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করছে। এখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে কোন বিষয় তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করো আমি অবশ্যই বলে দিব)
 হাদিস দ্বারা দুটি বিষয় সম্পর্কে জানা গেল। এক, হুযুর আলাইহিস সালাম এর জ্ঞান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। দুই, কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাবলী সম্পর্কে হুযুর আলাইহিস সালাম অবগত

 

(১৯) মিশকাত শরীফের কিতাবুল ফিতান যুদ্ধ বিগ্রহের শীর্ষক অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে মুসলিম শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে মসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ

اِنِّىْ لَاَعْرِفُ اَسْمَاءَ هُمْوَاَسْمَاء اَبَاءِهِمْ وَاَلْوَانَ خَيُوْلِهِمْ خَيْرُ فَوَارِسِ اَوْمِنْ خَيْرِ فَوَارِسَ عَلى ظَهْرِالْاَرَضِ

অর্থাৎঃ তাদের নাম, (দাজ্জালের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণকারীগণের) তাঁদের বাপদাদাদের নাম তাঁদের ঘোড়া সমূহের বর্ণ পর্যন্ত আমার জানা আছে। তারাই হবেন ভূপৃষ্টের সর্বো উৎকৃষ্ট ঘোড়সওয়ার

 

(২০) মিশকাত শরীফের مناقب ابي بكر وعمر অধ্যয়ে বর্ণিত আছেঃ হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাদিআল্লাহু আনহু) হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট জানতে চাইলেন, এমন কেউ আছেন কিনা যা নেকী সমূহ তারকারাজির সমসংখ্যক হবে? হুযুর আলাইহিস সালাম উত্তরে ইরশাদ ফরমান, হ্যাঁ, এবং তিনি হলেন হযরত উমর (রাদিআল্লাহু আনহু)
থেকে বোঝা গেল যে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত লোকের দৃশ্যমান গোপনীয় যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কে হুযুর আলাইহিস সালাম পূর্ণরূপে অবগত আছেন। আসমানের সমস্ত দৃশ্যমান অদৃশ্য নক্ষত্র সমূহেরও বিস্তারিত জ্ঞান তাঁর (হুযুর আলাইহিস সালাম) এর রয়েছে; অথচ নক্ষত্র সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকগণ তাদের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যেও এখনও পর্যন্ত কিছুই জানতে পারেননি।
হুযুর আলাইহিস সালাম দুবিষয় (আমল নক্ষত্র সম্বন্ধে সম্যকরূপে অবগত বিধায় বলে ছিলেন যে, হযরত উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) এর নেকসমূহ নক্ষত্র রাজির সংখ্যার সমান দুটো বস্তুর পরিমাণগত সংখ্যাগত দিক থেকে সমান বা কম বেশী হওয়া সম্পর্কে তিনিই বলতে পারেন, যিনি উভয়টির জ্ঞান রাখেন। উভয় বস্তুর সংখ্যা বা পরিমাণ সম্বন্ধেও সম্যকরূপে অবগত হন।
গুলো ছাড়াও আরও অনেক হাদীছ উপস্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু পরিচ্ছেদকে সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে এতটুকু যথাযথ মনে কারা হয়েছে। হাদীস  সমূহ থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে, সমস্ত জগত হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে নিজ হাতের তালুর মত। লক্ষণীয় যে عالم (আলম) বলতে আল্লাহ ব্যাতীত বাকী সবকিছুকে বোঝায়। সুতরাং আলমে মালায়িকা (স্তুল জগত, সূক্ষ্ম জগত সৃক্ষ্ণাতি সূক্ষ্ম জগৎ সমূহ) আরশ ফরশ মোট কথা প্রত্যেক কিছুর উপর হুযুর আলাইহিস সালামের দৃষ্টি রয়েছে। আলমের অন্তর্ভুক্ত লওহে মাহফুজও, যেখানে সমস্ত বিষয় লিপিবদ্ধ আছে

 

দ্বিতীয়তঃ এও বোঝা গেল যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বাপর সমস্ত ঘটনাবলী সম্পর্কেও জ্ঞাত

 

তৃতীয়তঃ ইহাও বোঝা গেল যে, রাতের অন্ধকারে নির্জনে নিভৃতে যেসব কাজ সম্পন্ন  করা হয়, উহাও মুহাম্মদ মুস্তাফা আলাইহিস সালামের দৃষ্টি থেকে লুকায়িত নয়। যেমন আবদুল্লাহের বাপ যে হুযাইফা সে সম্পর্কেও তিনি বলে দিয়েছেন

 

চতুর্থতঃ এও বোঝা গেল যে, কে, কখন, কোথায় মারা যাবে, কোন অবস্থায় মারা যাবে, কাফির কি মুমিন হবে, নারীর গর্ভে কি আছে সমস্ত কোন বিষয়ই হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে লুকায়িত নয়। মোট কথা বিশ্বের অণুপরমাণু বিন্দু বিসর্গ সম্পর্কেও হুযুর আলাইহিস সালামের সম্যক জ্ঞান রয়েছে।সূত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড

() ‘আইনী শরহে বুখারী, ফতহুলবারী, ইরশাদুস সারী শরহে বুখারী, মিরকাত শরহে মিশকাত প্রভূতি গন্থে আলোচ্য অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে উল্লেখিত ১নং হাদিসের প্রেক্ষাপটে লিখা হয়েছে

فِيْهِ دَلَالَةٌ عَلى اَنَّهُ اَخْبَرَ فِى الْمَجْلِسِ الْوَاحِدِ بِجَمِيْعِ اَحْوَالِ الْمَخْلُوْقَاتِ مِنْ اِبْتَدَاءِهَا اِلى اِنْتِهَائِهَا

( হাদিস থেকে বোঝা গেল যে একই অবস্থানে হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টিকুলের আদ্যোপ্রান্ত যাবতীয় অবস্থার খবর দিয়েদিলেন)

 

() মিরকাত শরহে মিশকাত শরহে শিফা মোল্লা আলী কারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) রচিত যুরকানী শরহে মওয়াহেব নসিমুর রিয়ায শরহে শিফা প্রভৃতি ব্যাখ্যা গ্রন্থ সমূহে ৪নং হাদীছের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ

وَحَاصِلُهُ اَنَّهُ طُوِىَ لَهُ الْاَرْضَ وَجَعَلَهَا مَجْمُوْعَةً كَهَيْئَةِ كَفٍّ فِيْهِ مِرْءَةٌ يَنْظُرُ اِلى جَمْعِهَا وَطَوَاهَا بِتَقْرِيْبِ بَعِيْدِهَا اِلى قَرِيْبِهَا حَتَّى اِطَّلَعْتُ عَلى مَافِيْهَا

অর্থাৎঃ হাদীসের সারমর্ম হচ্ছেঃ হুযুর আলাইহিস সালামের জন্য পৃথিবীকে সঙ্কুচিত করে দেয়া হয় এবং এমনভাবে একত্রিত করে দেয়া হয় যেন কেউ এক হাতে আয়না নিয়ে সম্পূর্ণ আয়নাকে দেখছেন। যমীনকে এমনভাবে একত্রিত করে দেয়া হয় যাতে দূরবর্তী অংশ নিকটবর্তী অংশের একেবারে কাছাকাছি দৃষ্টিগোচর হয়। ফলে পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) দেখতে পেয়েছেন।
() মিরকাত শরহে মিশকাত ৫নং হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে ফয়েয প্রাপ্তির দরুণ আমি আসমান যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুই জেনে নিয়েছি। অর্থাৎ আসমান যমীনের ফিরিশতাকূল গাছপালা অন্যান্য যা কিছু মহান আল্লাহ জ্ঞাত করিয়েছেন সবই জেনে নিয়েছি। এটা হচ্ছে তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সেই ব্যাপক জ্ঞানের বর্ণনা যা আল্লাহ তাআলা তার কাছে ব্যক্ত করেছেন। ইবনে হাজর (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) জেনে নিয়েছেন সমস্ত সৃষ্টি যা আসমান সমূহে বরং যা আসমানের উপরেও রয়েছে। ( তথ্য মিরাজের বর্ণনা সম্বলিত হাদীছ থেকে জানা যায়) এবং জেনে নিয়েছেন যা কিছু পৃথিবীতে আছে এবং সে সমস্ত বস্তুও যা পৃথিবীর ৭টি স্তরেই বরং আরো নিচে রয়েছে। একথা সে সমস্ত হাদীসথেকে বোঝা যায় যেগুলোতে এমন গাভী মাছের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে যা উপর পৃথিবীর স্তরসমূহ  স্থিতাবস্থায় রয়েছে।
আশয়াতুল লুময়াত শরহে মিশকাত গ্রন্থে উপরোক্ত ৫নং হাদীছের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ হাদীসে তার বিশিষ্ট সামগ্রিক জ্ঞান অর্জনের উহার পরিব্যাপ্তির কথা বলা হয়েছে।
() আশয়াতুল লুময়াত শরহে মিশকাতে ৭নং হাদীছ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃআমার কাছে প্রত্যেক ধরনের জ্ঞান প্রতিভাত হয়েছে এবং আমি সবকিছুই জেনে নিয়েছি।
আল্লামা যুরকানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে মওয়াহেব গ্রন্থে উক্ত ৭নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃআমার সামনে দুনিয়াকে প্রতিভাত করা হয়েছে, উন্মুক্ত করে  দেয়া হয়েছে যার ফলে আমার দৃষ্টি উহার সমস্ত বস্তুকে পরিবেষ্টন করেছে। সুতরাং আমি পৃথিবীকে এবং যা কিছু কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে হবে এমনভাবে দেখতে পেয়েছি যেমনিভাবে আমার হাতকে দেখতে পাচ্ছি। এখানে একথারই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে, হুযুর আলাইহিস সালাম বাস্তবরূপেই দেখেছেন। অতএব কথা আর বলা চলবে না যে نظر (নযর) শব্দ বলতে জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে।
() ইমাম আহমদ কুসতলানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার মওয়াহেব শরীফে ৮নং হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেছেনএতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালামকে এর থেকে (৮নং হাদিছে বর্ণিত বিষয় সমূহ) আরও অধিক বিষয়ে অবহিত করেছেন এবং তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) পুর্ববর্তী পরবর্তী সবার জ্ঞান দান করেছেন।
হযরত মোল্লা আলী কারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ১৭নং হাদীস সম্পর্কে বলেনঃ

يُخْبِرُ كُمْ بِمَا مَضى اَىْ سَبَقَ مِنْ خَبْرِ الْاَوَّلِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمَاهُوَ كَائِنٌ بَعْدَكُمْ اَىْ مِنْ نَبَاءِ الْاخِرِيْنَ فِىْ الدُّنْيَا وَمِنْ اَحْوَالِ الْاَجْمَعِيْنَ فِى الْعُقْبى

(হুযুর আলাইহিস সালাম তোমাদেরকে পূর্ববর্তী লোকদের অতীত ঘটনাবলীর সংবাদ দিচ্ছেন তোমাদের পরবর্তী লোকদের খবর দিচ্ছেন অর্থাৎ ইহকালীন পরকালীন যাবতীয় বিষয়ের সংবাদ পরিবেশন করছেন।)
() মিরকাতে ১৯নং  হাদীস পসঙ্গে লিখা হয়েছেঃ

فِيْهِ مَعَ كَوْبِه مِنَ الْمُعْجِزَاتِ دَلَالَةٌ عَلى اَنَّ عِلْمَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مُحِيْطٌ بِالْكُلِّيَاتِ وَالْجُزْئِيَاتِ مِنَ الْكَائِنَاتِ وَغَيْرِهَا

( হাদীসের মধ্যে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর মুজিযার উপলব্ধির সাথে সাথে কথাও বোঝা যায় যে, হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সৃষ্টির যাবতীয় বিষয়কে এককভাবে সামগ্রিকরূপে পরিবেষ্টন করে রয়েছে।)
হাদীসবেত্তাগণের এসব ইঙ্গিত থেকে বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সমস্ত জগতকে এবং এতে সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য যাবতীয় বিষয়কে এমনভাবে অবলোকন করছিলেন যেমনভাবে কেউ নিজ হাতে আয়না নিয়ে আয়নাতে তাকাচ্ছেন। উল্লেখ্য যে লওহে মাহফুজও জগতের অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়তঃ এও জানা যায় যে, সমস্ত পূর্ববর্তী পরবর্তী জ্ঞানীদের অর্থাৎ আম্বিয়া কিরাম ফিরিশতা আওলিয়ার জ্ঞান তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) দান করা হয়েছে। নবীগণের মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) হযরত ইব্রাহীম খলীল (রহমতুল্লাহে আলাইহে) হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) অন্তর্ভুক্ত আছেন। আর ফিরিশতাদের মধ্যে আরশ বহনকারী লওহে মাহফুজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতাগণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, যাদের জ্ঞান যা হয়েছে যা হবে ইত্যাদি বিষয়ে পরিব্যাপ্ত। তাহলে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের পরিব্যাপ্তি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করার কোন অবকাশ আছে কি? তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) জ্ঞানের সুবিস্তৃত পরিধির মধ্যে পঞ্চ عُلُوْمِ خَمْسَة  জ্ঞানও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।সূত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড

মাদারেজুন নবুয়াত গ্রন্থের ভূমিকায় শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ) বলেনঃ

هُوَالْاَوَّلُ وَالْاَجِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْئٍ عَلِيْمٌ

তিনিই প্রথম তিনিই সর্বশেষ তিনিই দৃশ্যমান তিনিই গোপন এবং তিনি প্রত্যেক কিছু জানেন।)
কথাগুলো আল্লাহ তাআলার প্রশংসায় যেমন বলা যায়, আবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) গুণকীর্তনেও বলা যায়। যেমন তিনি (দেহলবী) বলেনঃ  হুযুর আলাইহিস সালাম সব কিছুর জ্ঞান রাখেন। এমনকি আল্লাহ তাআলার স্বত্ত্বগত বিষয়াদি, গুণাবলী, বিধিবিধান, বিভিন্ন নাম, যাবতীয় কার্যাবলী বিবিধ নিদর্শন, সমস্ত দৃশ্য অদৃশ্য বিষয়াদি, অদি অন্ত প্রভৃতির যাবতীয় জ্ঞান তারই করায়ত্ত্ব। প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর অপেক্ষাকৃত বেশী জ্ঞানী বিদ্যমান প্রবচনটি তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
উক্ত মাদারেজ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের পঞ্চম অধ্যায়ে হুযুর আলাইহিস সালামের ফযীলতের বর্ণনা প্রসঙ্গে ১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছেঃ– (হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শিঙ্গায় ফুক দেয়া পর্যন্ত সব কিছুই হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে প্রতিভাত করা হয়েছে, যাতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর অবস্থাদি সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত হন। তিনি ধরনের কিছু কিছু বিষয়ের সংবাদ সাহাবায়ে কিরামকেও দিয়েছেন।)
আল্লামা যুরকানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে মওয়াহেবে লদুনীয়ায় বলেছেনঃঅগণিত বর্ণনাকারীর সমর্থনপুষ্ট হাদীছ সমূহের সর্বসম্মত ভাবার্থে কথা বলা হয়েছে যে, গায়ব সম্পর্কে হুযুর আলাইহিস সালাম অবগত এবং মাসআলাটি সে সব আয়াতের পরিপন্থী নয় যেগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গায়ব জানে না। কেননা উক্ত আয়াত সমূহে যে বিষয়টির অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে তা হলো মাধ্যম ছাড়া অর্জিত জ্ঞান (স্বত্বাগত জ্ঞান) আর হুযুর আলাইহিস সালামের খোদা প্রদত্ত জ্ঞানের বলে গায়ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ব্যাপারটি আল্লাহর কালামের সে আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যেখানে বলা হয়েছেঃ اِلَّامَنِ ارْتَضى مِنْ رَّسُوْالٍ (কেবল তাঁর পছন্দনীয় রসূলকে অদৃশ্য বিষয়াদির জ্ঞান দান করা হয়।)
শেফা শরীফে কাজী সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন, (খরপূতী) শরহে কসিদায়ে বোর্দা থেকে সংগৃহীত।)
(আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালামকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে দ্বীনদুনিয়ার সমস্ত মঙ্গলময় বিষয়াদির জ্ঞান দান করেন। নিজ উম্মতের মঙ্গলজনক বিষয়, আগের উম্মতগণের ঘটনাবলী এবং নিজ উম্মতের নগণ্য হতে নগণ্যতর ঘটনা সম্পর্কেও তাঁকে অবহিত করেছে; মারিফাতের সমস্ত বিষয় তথা অন্তরের অবস্থাসমূহ, ফরয কার্যাবলী  ইবাদত সমূহ এবং হিসাবনিকাশ ইত্যাদি বিষয়েও তাঁকে অবহিত করেছেন।)
কাসীদায়ে বোর্দায় আছেঃ

فَاِنَّ مِنْ جُوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا  وَمِنْ عُلُوْمِكَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ

অর্থাৎ হে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

আপনার বদান্যতায় দুনিয়া আখিরাতের অস্তিত্ব। লওহে মাহফুজ কলমের জ্ঞান আপনার জ্ঞান ভাণ্ডারের কিয়দাংশ মাত্র।)
আল্লামা ইব্রাহীম বাজুরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এর শরহে কসীদায়ে বোর্দার পংক্তিদ্বয়ের তাৎপর্য বিশ্লেষণে লিখা হয়েছে
যদি লওহে মাহফুজ কলমের জ্ঞানকে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের কিয়দাংশ বলা হয়, তাহলে তার জ্ঞানের অন্যান্য অংশগুলো দ্বারা কোন ধরনের জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে? এর উত্তরে বলা হয়েছে যে উহা হলো পরকালের অবস্থাদির জ্ঞান যা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা তাকে অবহিত করেছেন। কেননা কলম দিয়ে লওহে মাহফুজে সকল বিষয়ই লিখা হয়েছে যা কিছু কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে।
মোল্লা আলী কারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) حل العقده شرح قصيده برده নামক গ্রন্থে উপরোক্ত পংক্তিদ্বয়ের মর্ম উদঘাটন করতে গিয়ে বলেছেনঃ
(
লওহে মাহফুজ কলমের জ্ঞানকে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের কিয়দাংশ জন্যই বলা হয় যে হুযুরের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জ্ঞানকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করা যেতে পারে। যেমন তাঁর জ্ঞান বস্তু বা বিষয়ের  একক, সামগ্রিক সত্ত্বা, মৌলিক সত্ত্বা খোদার পরিচিতি এমনকি খোদার সত্ত্বাও গুণাবলী সম্পর্কিত পরিচিতিকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। সুতরাং লওহ কলমের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমুদ্রের একটি খালতুল্য কিংবা তার জ্ঞানের দপ্তরের এক অক্ষর সদৃশ্য মাত্র।
উল্লেখিত উদ্ধৃতি সমূহ থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, লওহ কলমের বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান যার সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছেوَ لَارَطَبِ وَلَا يَابِسٍ اِلَّا فِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ (ভিজা শুকনা এমন কোন বস্তু নেই যা লওহে  মাহফুজে উল্লেখ করা হয়নি) হুযুর আলাইহিস সালামের বহুমুখী জ্ঞান সমদ্রের এক ফোটা মাত্র। তাহলে বোঝা গেল যে পূর্বাপর সব বিষয়ের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান ভাণ্ডারের একটি বিন্দু মাত্র।
কসীদায়ে বোর্দার সুপ্রসিদ্ধ লিখক ইমাম বুচিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার অন্য এক কসিদায় বলেছেনঃ

وَسِعَ الْعَالَمِيْنَ عِلْمًا وَّ حِكْمًافَهُوَ بَحْرٌ لَّمْ تَعِيْهَا الْاَعْبَاءُ

হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানবিজ্ঞান সমগ্র জগতকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। তিনি হচ্ছেন এমন এক সাগর যাকে অন্যান্য পরিবেষ্টনকারীরাও পরিবেষ্টন করতে পারেননি)
শাইখ সুলাইমান জুমাল উক্ত পংক্তিদ্বয়ের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফুতুহাতে আহমদীয়া গ্রন্থে লিখেছেনঃ
তার জ্ঞান সমগ্র জগত তথা জীনইনসান এবং ফিরিশতাগণের ব্যাপক জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ তাকে সারা জগত সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। তার ব্যাপক জ্ঞানের জন্য কুরআনের জ্ঞানই যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ مَا فَرَّطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَيْىٍئ অর্থাৎ আমি কিতাবে কোন কিছু বাদ দিইনি। ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) উক্ত পংক্তিদ্বয়ের ব্যাখ্যায় اَفْضَلُ  الْقُرَى নামক কিতাবে লিখেছেনঃ

لِاَنَّ اللهَ تَعَالَى اَطْلَعَهُ عَلَى الْعَالَمِ فَعَلِمَ الْاَو َّلِيْنَ وَالْاَخِرِيْنَ وَمَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ

মহান আল্লাহ হুযুর আলাইহিস সালামকে সমস্ত জগত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সুতরাং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্ববর্তী পরবর্তী বিষয়সমূহ যা কিছু হয়েছে এবং যা কিছু হবে সবকিছুই জেনে নিয়েছেন।)
উক্ত উদ্ধৃতিসমূহ থেকে বোঝা গেল যে, সমস্ত বিশ্ববাসীর জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববাসীদের মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম।) রয়েছেন।
ফিরিশতাগণ, মৃত্যুর ফিরিশতা শয়তানও অন্তর্ভুক্ত আছে। উল্লেখ্য যে, মৃত্যুর ফিরিশতা শয়তানের ইলমে গায়ব দেওবন্দীরাও স্বীকার করে।
ইমাম বুচিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে)কসীদায়ে বোর্দায় উল্লেখ করেছেনঃ

وَكُلُّهُمْ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ مُلْتَمِسٌ
غَرْفًا مِّنَ الْبَحْرِ اَوْ رَشْفًا مِنَ الدِّيْمِ

(সবাই হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট থেকে জ্ঞান আহরণ করে থাকেন, যেমন কেউ সমুদ্র থেকে কলসি ভরে বা প্রবল বৃষ্টি ধারার ছিটে ফোঁটা থেকে পানি সংগ্রহ করে।)
আল্লামা খর পূতী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে কছীদায়ে বোর্দায় পংক্তিদ্বয়ের তাৎপর্য বিশ্লেষণে লিখেছেনঃ
(প্রত্যেক নবী হুযুর আলাইহিস সালামের সে জ্ঞান ভান্ডার থেকে জ্ঞান চেয়ে নিয়েছেন, যা বিস্তৃতি ব্যাপকতার দিক দিয়ে বিশাল সমুদ্রের মত এবং সবাই তাঁর সে করুণারাশি থেকে করুনা প্রাপ্ত হয়েছে, যা অঝোর বারিধারার মত। কেননা, হুযুর আলাইহিস সালাম হলেন ফয়েয দাতা আর অন্যান্য নবীগণ হলেন ফয়েয গ্রহীতা। মহাপ্রভু সর্বপ্রথম হুযুর আলাইহিস সালামের রুহ মুবারক সৃষ্টি করে তাতে নবীগণের পূর্বাপর প্রত্যেক বিষয়ের জ্ঞান রাশি সঞ্চিত রাখেন। অতঃপর অন্যান্য রসুলগণকে সৃষ্টি করেন। সুতরাং তারা সবাই নিজ নিজ জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে সংগ্রহ করেছেন)
হযরত হাফিজ সোলাইমান (রহঃ) ইবরীয শরীফের ২৫৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ

وَ عِنْدَنَا يَعْلَمُ عَلَيْهِ السَّلَامِ مِنَ الْعَرْشِ اِلَى الْفَرْشِ وَيَطَّلِعُ عَلَى جَمِيْعِ مَا فِيْهَا وَهَذَا الْعُلُوْمُ بِالنِّسْبَلةِ اِلَيْهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَاَلْفٍ مِنْ سِتِّيْنَ جُزْءُ الَّتِىْ هِىَ الْقُرْاَنُ الْعَزِيْزُ

(আমাদের মতে হুযুর আলাইহিস সালাম আরশ থেকে পাতালপুরী পর্যন্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে তারও খবর রাখেন। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপরে আর কেউ নেই। ব্যাপক জ্ঞানও হুযুর (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞানের পরিধির তুলনা মুলক সম্পর্ক হচ্ছে এরুপ, যেরূপ ষাট অংশ বিশিষ্ট কুরআনের তুলনায় আলিফ অক্ষরটি।
প্রখ্যাত ইমাম কুসতালানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) মওয়াহেব শরীফে উল্লেখ করেনঃ

اَلنَّبُوَّةُ مَا خُوْذَةٌ مِنَ النَّبَّاءِ بِمَعْنِىَ الْخَبَرِ اَىْ اَطْلَعَهُ اللهُ عَلَى الْغَيْبِ

نَبُوَّت শব্দটি نَبَا শব্দ প্রকৃতি থেকে উদ্ভুত যার অর্থ হচ্ছে খবর বা জ্ঞান। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তাকে অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। মওয়াহেবে লদুনীয়ার দ্বিতীয় খন্ডে ১৯২পৃষ্ঠায় اَلْقِسْمُ الثانِى فِيْمَا لَخْبَرَبِهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنَ الْغُيُبِশীর্ষক আলোচনায় লিখা হয়েছেঃ

لَاشَكَّ اَنَّ اللهَ تَعَالَى قَدْ اَطْلَعَهُ عَلَي اَزِيْدَ مِنْ ذلِكَ وَاَلْقَى عَلَيْهِ عِلْمَ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاَخِرِيْنَ

(এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালামকে এর থেকে বেশী বিষয় সমুহ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তার কাছে পূর্ববতী পরবর্তী জ্ঞানীদের সমুদয় জ্ঞান অর্পণ করেছেন)
হযরত মুজাদ্দিতে আলফে ছানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাঁর মকতুবাত শরীফের প্রথম খন্ডের ৩১০ নং মকতুবে বলেছেনঃ

هر علم كه مخصوص به اوست سبحانه خاص رسل رااطلاع مى بخشند

(যে জ্ঞান আল্লাহর জন্য বিশেষরুপে নির্দ্ধারিত, সে জ্ঞান কেবল রসুলগণকে জ্ঞাত করা হয়।
মাদারেজুন নাবুয়াতের প্রথম খন্ডে উল্লেখিত আছেঃ
(কোন পুন্যাত্মা আলেমের মুখে শুনা গেছে যে, কোন আরেফ বা খোদার পরিচয় প্রাপ্ত ব্যাক্তি একটি কিতাব লিখেছেন। সেখানে তিনি প্রমান করেছেন যে, আল্লাহ তাআলার সমস্ত জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে দান করেছেন। কথাটি আপাতঃ দৃষ্টিতে অনেক দলীল প্রমানের পরীপন্থী। জানিনা এরুপ উক্তি থেকে বক্তা কি বোঝাতে চেয়েছেন।)
উপরোক্ত উক্তিটি এখানে জন্য উল্লেখ করা হলো যে, কোন কোন লোক হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানকে আল্লাহ তাআলা জ্ঞানের সমপরিমাণ বলে বিশ্বাস করেন; শুধু একথা স্বীকার করেন যে খোদার জ্ঞান সত্ত্বাগত আর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জ্ঞান খোদা প্রদত্ত এই যা পার্থক্য। কিন্তু দেখুন শাইখ আবদুল হক ছাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাদেরকে মুশরিক বলেননি বরং আরিফই বলেছে। এতে বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালামের জন্য ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান স্বীকার করা শিরক নয়।
মীর যাহেদের রেসালার ভূমিকায় উল্লেখিত আছেঃ
অর্থাৎ যাবতীয় অবধারণ প্রসূত জ্ঞান রাশি স্বভাবতই সেই পবিত্র সত্ত্বাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। আর সামান্য ধারণা সমূহের স্বয়ং জাত্যর্থ সমূহও ওই পূতঃপবিত্র সত্ত্বাভিমুখী তাবৎ প্রজ্ঞামূলক বিষয়ের সামান্য ধারণা অবধারণ সমূহের কেন্দ্র হচ্ছে তারই সুমহান রূহ মুবারক। আর প্রজ্ঞার সাথে সম্বন্ধিত বুদ্ধি বৃত্তি নির্ভর বুদ্ধি বৃত্তি প্রয়োগ ছাড়া বোধগম্য তাবৎ জ্ঞাতব্য বিষয়ের নির্ঝরণী হচ্ছে তারই মহিমান্বিত আত্মসত্ত্বা।
বিঃদ্রঃ যুক্তি বিদ্যায় দুটো ধারণার মধ্যে একটির সাথে অপরটির সম্পর্কের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক মানসিক প্রক্রিয়াকে تصديق অবধারণ বলা হয়।
বস্তুর মানসিক প্রতিবেদনকে সামান্য ধারণা تصور বলা হয়ে থাকে।
উপজাতিবাচক পদ যা উপজাতির অন্তর্ভক্ত ব্যক্তিবৃন্দের افرادউপর সমভাবে প্রযোজ্য হয় তাই حقيقت জাত্যর্থ। যেমনমানুষ ধারণাটি রহিম, করিম, বকর, যায়দ প্রমুখের উপর সমভাবে প্রযোজ্য
উক্ত রেসালার ব্যাখ্যাগ্রন্থ মওলানা গোলাম ইয়াহিয়া কর্তৃক রচিত لواءالهدى নামক কিতাবে উক্ত উদ্ধৃতি তাৎপর্য বিশ্লেষণে লিখা হয়েছে فذاته عليه السلام جامع بين حميع انحاء العلوم অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম এর সত্ত্বা সর্ববিধ জ্ঞানের আকর।
সুবাহানাল্লা! উদ্ধৃতি দ্বারা রহস্যঘেরা যবনিকার উত্থোলন হল। যুক্তিবাদীরাও নবীর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন মহান দরবারে মাথা নত করলেন।
বাহরুল উলুম মওলানা আবদুল আলী লখনবী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) মীর যাহেদ রেসালার টীকার ভূমিকায় লিখেছেন
আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালামকে সেই সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন যেগুলো সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কলম বা কলমে আলার আওতায়ও আসেনি। লওহে মাহফুজও সেগুলোকে আয়ত্ত্ব করতে পারেনি। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মত কোন কালে কেউ জন্মগ্রহণ করেননি সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে; আর অনন্তকাল পর্যন্ত কেউ তার সমকক্ষ হবেন না। সমস্ত নভোমন্ডল ভূমন্ডলে কোথাও তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
আল্লামা শুনউয়ারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) جمع النهاية নামক  কিতাবে বলেন

قَدْ وَارَدَ اَنَّ اللهَ تَعَالَى لَمْ يُخْرِجِ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَتَّى اَطْلَعَهُ عَلَى كُلِّى شَىْءٍ

(একথা বর্ণিত হয়েছে যে আল্লাহ তাআলা নবী আলাইহিস সালামকে সর্ব বিষয়ে অবহিত না করে ধরাধাম থেকে নিয়ে যাননি।
শরহে আকায়িদে নসফী গ্রন্থের ১৭৫ পৃষ্ঠায় আছেঃ

بِالْجُمْلَةِ الْعِلْمُ بِالْغَيْبِ اَمْرٌ تَفَرَّدَ بِه اللهُ تَعَالى لَا سَبِيْلَ اِلَيْهِ لِلْعِبَادِ اِلَّا بِاِعْلَامٍ مِنْهُ اَوْ اِلْهَامٍ بِطَرِيْقِ الْمُعْجِزَاتِ اَوِ الْكِرامَةِ

(সার কথা হলো এযে অদৃশ্য বিষয়াবলীর জ্ঞান এমন একটি বিষয়, যার একমাত্র অধিকারী আল্লাহ তাআলা। বান্দাদের পক্ষে ওইগুলো আয়ত্ব করার কোন উপায় নেই, যদি মহান প্রভু মুজিযা বা কারামত স্বরুপ ইলহাম বা ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন।
সুপ্রসিদ্ধ দুররুল মুখতার গ্রন্থের কিতাবুল হজ্বের প্রারম্ভে আছে

فُرِضَ الْحَجُّ سَنَةَ تِسْعٍ وَ اِنَّمَا اَخَّرَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لِعَشَرِ لِعُذْرٍ مَعَ عِلْمِه بِبَقَاءِ حَيَاتِه لِيَكْمُل التَّبْلِيْغُ

হজ্ব নবম হিজরীতে ফরজ হয়, কিন্তু হুযুর আলাইহিস সালাম বিশেষ কোন কারনে একে দশম হিজরী পর্যন্ত বিলম্বিত করেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তার পবিত্র ইহকালীন জীবনের বাকী সময় সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন বিধায় হজ্ব স্থগিত করেছিলেন যাতে ইসলাম প্রচারের কাজ পূর্ণতা লাভ করে )
ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে মৃত্যু কখন হবে সে বিষয়ের জ্ঞান পঞ্চজ্ঞানেরই অন্তভূক্ত। কিন্তু হুযুর আলাইহিস সালাম তার ওফাত সম্পর্কে অবগত ছিলেন, জানতেন যে নবম হিজরীতে তার ওফাত হবে না। জন্য সে বছর হজ্ব আদায় করেননি।  অথচ হজ্ব ফরজ হওয়ার সাথে সাথে উহা আদায় করা একান্ত প্রয়োজন।  কেননা আমরা মৃত্যুর খবর রাখি না।
আল্লামা খরপুর্তী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে কসীদায়ে বোর্দায় ইমাম বুচিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) রচিত উপরোক্ত পংক্তিদ্বয় প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
হযরত আমীর মুআবিয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে হাদীছ বর্ণিত আছে যে, তিনি হুযুর আলাইহিস সালামের সামনেই লিখার কাজ করতেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তাকে বলছিলেন দোয়াত এভাবে রাখ, কলমকে ঘুরাও, (ب) বা অক্ষরকে সোজা কর, (س) সীন অক্ষরটি পৃথক কর এবং (م) মীমকে বাঁকা করো না। অথচ হুযুর আলাইহিস সালাম লিখার পদ্ধতি শিখেননি পূর্ববর্তীদের কোন কিতাবও পড়েননি।
তাফিসীরে রুহুল বয়ানে وَلَا تَخُطُّ بِيَمِيْنِكَ আয়াতটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছেঃ

كَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَعْلَمُ لْخُطُوْطَ وَيُخْبِرُ عَنْهَا

(হুযুর আলাইহিস সালাম লিখতে জানতেন এবং সে বিষয়ে অপরকেও জ্ঞাত করতেন।)
থেকে প্রমাণিত হল যে হুযুর আলাইহিস সালাম ভালমতে লিখতে জানতেন। এর পূর্ণাঙ্গ গবেষণামূলক বিবরণ আমার রচিত শানে হাবীবুর রাহমান বি আয়াতিল কুরআন নামক কিতাবে দেখুন।
মছনবী শরীফে আছেঃ
অর্থাৎ ওলীগণের পদধুলিকে তোমার চোখের সুরমা স্বরূপ গ্রহণ কর যাতে তোমার আদি অন্তকালীন অবস্থা দৃষ্টিগোচন হয়। কামিল ওলীগণ অনেকদূর থেকে তোমার কথা শুনতে পান, তারা প্রয়োজনবোধে তোমার অংগ প্রত্যংগের রন্ধ্রে রন্ধ্রেও প্রবেশ করতে পারেন। তোমার জন্মের বহু পূর্বেই তোমার যাবতীয় অবস্থা অবলোকন করে থাকেন। তোমার যাবতীয় অবস্থা পুরোপুরিভাবে তাঁরা জানেন, কেননা তারা আল্লাহর রহস্যাবলীর ধারক হয়ে থাকেন।
সেই মছনবী শরীফে মওলানা রুমী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বিধর্মী যুদ্ধ বন্দীদের একটি ঘটনা উল্লেখপূর্বক বলেন যে হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমানঃ
আমি সমস্ত সৃষ্টি জগতকে সে সময় থেকে দেখে আসছি তখন আদম হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টিও হয়নি। হে বিধর্মী বন্দীগণ প্রতিশ্রুতি গ্রহণের দিন (মীছাকের দিন) আমি তোমাদেরকে মুমিন নামাযীরূপে দেখেছিলাম। তোমাদেরকে জন্যই বন্দী করেছি যাতে তোমরা ঈমান আন। খুটিবিহীন আসমান ইত্যাদির সৃষ্টি আমি যেরূপ দেখেছি তার কোনরূপ তারতম্য এখনও পরিলক্ষিত হয়নি।)
উলামায়ে কিরামের এসব উক্তি থেকে বোঝা গেল যে আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালামকে সমস্ত নবী ফিরিশতা থেকেও বেশী জ্ঞান দান করেছেন। লওহে মাহফুজ কলমের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের এক ফোটা মাত্র। সৃষ্টি জগতের এমন কোন কিছু নেই যা হুযুর আলাইহিস সালামের সত্যদর্শী দৃষ্টি থেকে গোপন রয়েছে।সূত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড

এতক্ষণ পর্যন্ত ইলম গায়বের সমর্থনকারদের ভাষ্য সমূহ থেকে হুযুর আলাইহিস সালামের ইলমে গায়েব এর বিষয়টি প্রমাণ করা হলো। এবার এর অস্বীকারকারীদের মাননীয় মুরব্বীদের ভাষ্য সমূহ পেশ করা হচ্ছে, যাদ্বারা ইলমে গায়েব সম্পর্কিত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যায়।
হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত শামায়েলে ইমাদাদিয় গ্রন্থের ১১০ পৃষ্ঠায় বলেছেন, লোকে বলে, নবী ওলীগণ অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকার হন না। আমি বলি সঠিক পথের পথিকগণ যে দিকে দৃষ্টি দেন অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত হন। আসলে জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান। আঁ হযরত (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হুদাইবিয়ার ঘটনা হযরত আয়েশা (রহমতুল্লাহে আলাইহে) সম্পর্কিত ঘটনার ব্যাপারে অজ্ঞাত ছিলেন বিষয়টিকে বিরুদ্ধবাদীগণ তাদের দাবীর অনুকুলে মনে করেন। এরূপ ধারণা ভ্রান্ত। কেননা কোন কিছু জানার জন্য একাগ্রতা প্রয়োজন। (আনোয়ারে গায়বিয়া গ্রন্থের ২৫ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত।)

 

মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব লাতায়েফে রশিদিয়া গ্রন্থের ২৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ নবীগণ সব সময় অদৃশ্য বিষয়াদি দর্শন করেন, আল্লাহর সান্নিধ্যে রয়ে সবকিছুর প্রতি সজাগ সচেতন থাকেন। যেমন নবী আলাইহিস সালাম ফরমানঃ
لَوْتَعْلَمُوْنَ مَااَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًاوَّلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا
অর্থাৎ আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে নিশ্চয়ই তোমরা কম হাসতে এবং বেশী করে কাঁদতে। আরও ইরশাদ করেছেনঃ اِنِّىْ اَرى مَالَاتَرَوْنَ (নিশ্চয়ই আমি যা দেখি তা তোমরা দেখ না (আনোয়ারে গায়বিয়া ৩২পৃষ্ঠা।)

 

মৌলভী আশরাফ আলী থানবী সাহেব তকমীলুল ইয়াকীন গ্রন্থের (হিন্দুস্থান প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত) ১৩৫ পৃষ্ঠায় বলেনঃ শরীয়তে বর্ণিত আছে যে, রসুল  ওলীগণ অদৃশ্য বিষয় ভবিষ্যতের ঘটনাবলীর খবর দিয়ে থাকেন। কেননা যখন আল্লাহতাআলা গায়েব ভবিষ্যতের বিষয়াদি জানেন, সেহেতু সবকিছুই তার জানা মতে, তারই ইচ্ছানুসারে, তারই উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই সংঘটিত হয়ে থাকে। সুতরাংআল্লাহ যদি তার রসুল  ওলীগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তাকে গায়েব বা ভবিষ্যতের ঘটনাবলীর খবর দেন তবে প্রতিবন্ধকতা কিসের? যদিওবা আমরা ধারণা পোষণ করি যে গায়বী বিষয় সমূহের কোন কিছু সত্ত্বাগতভাবে জানা মানব প্রকৃতি সজ্ঞাত নয়, কিন্তু আল্লাহ যদি কাউকে অবহিত করেন তখন প্রতিরোধ করার কে আছে? সুতরাং যা কিছু তারা জানেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক জানানোর ফলেই জানতে পেরে অন্যান্যদেরকে খবর দেন। উনাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি সত্ত্বাগত ইলমে গায়েবের দাবীদার। মুহাম্মদী শরীয়তে (বান্দার জন্য) সত্বাগত ইলমে গায়বের দাবী করা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের মধ্যে গণ্য হয় এবং যে এরূপ দাবী করে তাকে কাফির বলা হয়।
মৌলভী কাসেম নানুতবী তাহযীরুন নাস গ্রন্থের পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, পূর্ববর্তীদের জ্ঞান এক ধরনের আর পরবর্তীদের জ্ঞান ভিন্ন ধরনের। ক্ন্তিু সে সমুদয় জ্ঞান আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর মধ্যে পুঞ্জিভূত করা হয়েছে। অতএব রসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হলেন প্রত্যক্ষ জ্ঞানী এবং অন্যান্য নবী ওলীগণ হলেন পরোক্ষ জ্ঞানী।
বক্তব্যের শেষ অংশটুকুর প্রতি লক্ষ্য করা দরকার যে, মৌলভী কাসেম সাহেব হুযুর আলাইহিস সালামের মধ্যে পূর্ববর্তী পরবর্তীগণের জ্ঞানের সামবেশ স্বীকার করেছেন। পূর্ববর্তীগণের মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম), হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম), হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) আরশ বহনকারী লওহে মাহফুজের দায়িত্বপ্রাপ্ত  ফিরিশতাগণও অন্তর্ভক্ত। সুতরাং উল্লেখিত সবার জ্ঞানের তুলনায় হুযুর আলাইহিস  সালামের জ্ঞান বেশী হওয়া চাই। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞান সম্পর্কে আমি পূর্বেই আলোকপাত করেছি।সূত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড

 

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইলমে গায়েব- (১ম অংশ)”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping cart0
There are no products in the cart!
Continue shopping
0